সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা এ বাংলাদেশের মাঠে প্রান্তরে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। এ দেশের অর্থনীতি বুনিয়াতসম্পন্ন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হলে সর্বাগ্রেই কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষকের পাশাপাশি কিষানিদেরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিতেও ভূমিকা রাখছে নারীরা। বর্তমানে নারীদের ঘামের বিনিময়ে এদেশ অনুপম সুন্দর ও পুষ্পময় এবং মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নতুন সবজির অযুত সম্ভাবনাময় এদেশকে সমৃদ্ধ করার পতাকা হাতে নিয়েছে বাংলার কিষানিরা। সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য নির্মোহভাবে বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে প্রতিদানহীন নিরব নিঃস্বার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ তারা। অক্লান্ত পরিশ্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার সঙ্গে সামিল হচ্ছে নারীরা। জাতিকে বড় করতে হলে কৃষক-কিষানিদের জাগাতে হবে।
বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার কিষানি মিনতি রানী। নিজের বিশ শতক জমিতে আগাম সবজি চাষ শুরু করেছে, জমিতে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে এবং এর ফলে সমাজে নারীদের ক্ষমতায়নও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিনতি রানীর মতো অনেক নারী কৃষক শুধু সংসারের আয়ের উৎস নয়, বরং তারা নিজস্ব উদ্যোগে জমি চাষাবাদ করে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এই এলাকায় নারীরা শীতকালীন সবজি চাষে সাফল্য অর্জন করছে। মিনতি রানী জানান, আগাম চাষে লাভ বেশি হয়, তাই রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরিশ্রম করছি। পরিবারের জন্য কিছু করতে পারা এক ধরনের তৃপ্তি। তিনি আরো বলেন, নারীরা কৃষিকাজে পারদর্শী হচ্ছে এবং নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। নারীদের কৃষি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে। তারা শুধু গৃহস্থালির কাজেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সফল কৃষক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে। পরিশ্রম করলে ফসল ভালো হবে এবং বাজারে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারব। এতে পরিবারের আয় বৃদ্ধি পাবে।
মিনতির মতো আরো অনেক নারী কৃষক, যারা শুধুমাত্র সংসারের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন, তারাও সমানতালে কৃষিকাজে যুক্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। নারীরা কৃষিকাজে নিজেদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বগুড়ার শাজাহানপুরের নারীরা আজ কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। সফলতা শুধু তাদের নিজস্ব জীবনমানকেই উন্নত করছে না, বরং সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। নারীদের এই অগ্রযাত্রা দেশের উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।