ঢাকা ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতু

যান চলাচলে সময় লাগবে আরো ১ মাস

যান চলাচলে সময় লাগবে আরো ১ মাস

চট্টগ্রামের বহুল প্রতিক্ষীত কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ প্রায় শেষের পর্যায় হলেও এখনই যান চলাচল উন্মুক্ত হচ্ছে না সেতুটি। যান চলাচল শুরু হতে আরো ১ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, এখন পর্যন্ত সেতুর সংস্কারকাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি সেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দল। এই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করতে এক মাস সময় চেয়েছে। এতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও সায় রয়েছে। পরামর্শক দল সেতুর সংস্কারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পরিদর্শনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরামর্শক দলের প্রধান সাইফুল আমিন। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন সদস্য। তারা প্রথমে নগরের সিআরবিতে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পরামর্শক দল সেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সংস্কারকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। কী কী কাজ বাকি রয়েছে এবং যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কী করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রাথমিকভাবে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে আরো বিস্তারিত নির্দেশনা দেবেন। জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুর প্রাথমিক সংস্কারকাজ শেষ করেছিলেন। তবে নানা প্রতিকূলতার কারণে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সংস্কারকাজ শেষ করা যায়নি। এখন অবশ্য শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে সেতুর ৯৮ শতাংশ কাজই শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সেতুটি দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করে খুলে দেওয়া হবে।

কালুরঘাট সেতুর সংস্কারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০২৩ সালের ১৬ জুন। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী এবং আট মাসের মধ্যে পথচারীসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কথা। কিন্তু ১৫ মাসেও সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারেনি রেলওয়ে। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে আরো এক মাস সময় নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. মেহেদী হাসান জানান, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর পরও নানা প্রতিকূলতার কারণে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সংস্কারকাজ শেষ করা যায়নি। এখন সেতুর ৯৮ শতাংশ কাজই শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ডেকোরেশনের কাজ। এক মাসের মধ্যে সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করে খুলে দেয়া হবে। সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বোয়ালখালী উপজেলার মানুষকে বিকল্প পন্থায় ফেরি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ সেতু দিয়ে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ভারী সংস্কারকাজের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সর্বশেষ কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাজের বিলম্ব হয়। এ কারণে ট্রেন সার্ভিস চালুর পরও যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত হয়নি সেতুটি। সর্বশেষ ২০ সেপ্টেম্বর রেলপথ সচিব আবদুল বাকি চট্টগ্রাম ভ্রমণের সময় রেলওয়ে কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে আরো এক মাস সময় দেয়া হয়। তবে সেতুটিকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে ১৯টি পিয়ারে নদীর তলদেশে জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজ কয়েক মাস বিলম্বিত হবে বলে জানিয়েছে রেলের সেতু বিভাগ। সম্প্রতি সেতুটির মেরামতকাজ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিন সদস্যের পরামর্শক টিম। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল আমিনের নেতৃত্বে দলটি সেতু সংস্কারকাজের সার্বিক অগ্রগতি শেষে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কাজের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেবেন। মূলত বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী সেতুতে যানবাহন চলাচল ছাড়াও ভুলত্রুটি নির্ধারণ করে বাকি কাজ শেষ করা হবে। সেতু দিয়ে স্বল্প গতিতে ভারী ট্রেন চলাচল করলেও সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলের গতিবেগ কত হবে সেটাও নির্ধারণ হবে বলে জানিয়েছে রেলের প্রকৌশল বিভাগ। কালুরঘাট সেতু সংস্কারের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীসান দত্ত জানান, কালুরঘাট সেতুর বেশির ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। এর পরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ ও কাজের মান যাচাইয়ের জন্য যানবাহন চলাচলে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। বুয়েটের পরামর্শক টিম এসে পরিদর্শন করলে সেতুটির সংস্কারকাজ শেষে তখন যান চলাচল শুরুর সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৯৩১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে নির্মিত হয়েছিল ৬৩৮ মিটার দৈর্ঘ্যের স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু। শুরুতে শুধু ট্রেন চলাচল করলেও ১৯৬২ সাল থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সড়কের টোল আদায় করে। যদিও ফেরি সার্ভিস চালু হলে যানবাহনের টোল আদায়ের দায়িত্ব বর্তাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওপর। জরাজীর্ণ সেতুটি দিয়ে আগে মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চলাচল করত। হালকা ওজনের লোকোমোটিভ ও কয়েকটি রেকের ট্রেন দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত দৈনিক এক জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও সংস্কারের পর এই সেতু দিয়ে গড়ে ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চলবে বলে আশা করছে রেলওয়ে। সেতুটি দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন তিন জোড়া ও সপ্তাহে কয়েক দিন দোহাজারীগামী জ্বালানি তেলের ওয়াগন চলাচল করলেও দৈনিক ২২-২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত