দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক কিছু বদলালেও বদলায়নি বিআরটিএ’র ময়মনসিংহ কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেট ভারী করার মনোভাব। সেবার পরিবর্তে এখনও পকেট কাটছে সেবাপ্রার্থীদের। বিআরটিএ অফিস আর দুর্নীতি- এ দুটি যেন একই সূত্রে গাঁথা। তবে দালালদের শরণাপন্ন হলে সহজেই হয়ে যায় ভোগান্তির উপশম। আর এজন্য গুনতে হয় সরকারি জমার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ। দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রতিটি কাজের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বখরা না পেলে চলে বিভিন্ন অজুহাত। সচেতন নাগরিকরা এই প্রতিষ্ঠানের সেবার মান বাড়িয়ে সচ্ছলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানান। একটি সূত্র বলছে, দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরুলের ছত্রছায়ায় এসব অনিয়ম চলে প্রকাশ্যে। এ কার্যালয় তথ্য মতে ২০২৪ সালে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেয়া হয় ৬০টি। সরকার নির্ধারিত ব্যাংক জমা ১৫ হাজার টাকা হলেও গাড়ির মালিকের নিকট হতে নেয়া হয় ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সিএনজি চালক আজমত আলী ভাষ্য, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স করতে গেলে বিআরটিএ’র দালালরা ১৫-২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দাবি করে। এজন্য লাইসেন্স করতে যাই না। একই অভিযোগ করেন সিএনজি মালিক দুলাল তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে সড়কে রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি চালাতে হচ্ছে। প্রতিটি সিএনজির রেজিস্ট্রেশনের জন্য দিতে হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ কথার সত্যতা প্রমান হয় ময়মনসিংহ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালকের কথায়।
তিনি নিজেই জানান, সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন করতে মালিকরা সরাসরি তাদের কাছে আসতে পারে না। এ কাজে সহযোগিতা করে শোরুম মালিকরা। আর টাকা দিলেই পাস করা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায়, এক্ষেত্রে পরীক্ষায় দক্ষতা প্রমাণের দরকার হয় না। প্রকারভেদে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সরকারি ফি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা হলেও দালালদের মধ্যেস্থতায় আদায় করা হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এদিকে ড্রাইভিং না জানলেও সজীব (ছদ্মনাম) নামের একজন সেবা প্রার্থী তিনি দালালের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে। প্রকৃতপক্ষে ড্রাইভিং না জানলেও পরীক্ষায় পাস করেছেন। এছাড়া ময়মনসিংহ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রাইভিং এর সকল কলাকৌশল জানার পরেও পরিক্ষায় পাস করার জন্য ৫ হাজার টাকা তাকে উৎকোচ দিতে হয়েছে। সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেরিয়ে আসে অনেক তথ্য তারা জানান, লিখিত মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দেয়া হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স। যেসব পরীক্ষার্থী দালালদের মাধ্যমে টাকা দেয়, তাদের এডমিট কার্ডে একটি বিশেষ সংকেত ব্যবহার করে বিআরটিএ’র লোকজন। মূলত এসব সংকেত দেখেই পরীক্ষায় পাস ফেল নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষার দিন ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেন বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরু। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া ছবি নেয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা মনে করেন কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে নতুন স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছে না জনগণ। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর অবস্থান করায় দালাল শ্রেণির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এসব কর্মকর্তা। জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত এসব অসাধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বিষয়ে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এএসএম ওয়াজেদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের সকল কার্যক্রম অনলাইনে মাধ্যমে হয়। আবেদন করার ২ মাস পর লাইসেন্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাদের সাথে পরীক্ষার্থীদের কোনো যোগাযোগ নেই। দালালদের মাধ্যমে পরীক্ষায় পাস করার সুযোগ নেই। বক্তব্য জানতে গেলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) সাক্ষাৎ চেয়েও পাওয়া যায়নি। পরে জেলা প্রশাসক বক্তব্য দিতে চেয়ে দুই ঘন্টা বসিয়ে রেখে তিনি ব্যস্ততা দেখান। এ অফিসের দুর্নীতির বিরোধী অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদকের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যে কোনো দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের হেড অফিসে কেউ অভিযোগ দায়ের করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা অভিযান পরিচালনা করব। এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।