ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সপ্তাহজুড়ে থাকবে বৃষ্টি

সপ্তাহজুড়ে থাকবে বৃষ্টি

আশ্বিনের মাঝামাঝিতে চলা বৃষ্টির প্রবণতা সপ্তাহজুড়েই থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টির কারণে দুই বিভাগের নদীর পানি বাড়ছে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আবহাওয়া অধিদপ্তর সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত দিয়েছে। কয়েকটি নৌপথে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ব্রজপাত। এসময় দুর্ভোগে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষরা। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, মোটামুটি এ সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টি থাকবে। কোথাও গ্যাপ দিবে, কোথাও কন্টিনিউ চলবে। কমবেশি সারা দেশেই থাকবে। যেমন ধরেন, ৪ তারিখ পর্যন্ত বেশি থাকবে, ৫-৬ তরিখ কমবে। আবার ৭ তারিখে বেশি বৃষ্টি হবে। আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে চট্টগ্রামে। এছাড়া নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ৮৩, কক্সবাজারে ৪৯ মিলিমিটারসহ প্রায় সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয় অতি ভারি বৃষ্টিপাত। গত বুধবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরের সৈয়দপুরে ও শ্রীমঙ্গলে। এসময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমার আভাস এসেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। দুই বিভাগে নদীর পানি বাড়ছে : বৃষ্টির কারণে দেশের দুই বিভাগে নদীর পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গত বুধবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়বে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আর সারিগোয়াইন, খোয়াই, কংস, ভুগাই ও ধলাই নদীর পানি কমছে। অন্যদিকে যাদুকাটা, মনু ও সোমেশ্বরী নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিনদিন সিলেট বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানানো হয় বন্যার পূর্বাভাসে। বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী ও হালদা নদীর পানি কমছে, ফেনী ও সাঙ্গু নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে মুহরী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিনদিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আর রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর ও তার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি ধীর গতিতে বাড়তে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যার পূর্বভাস বলছে, রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র ও তার ভাটির যমুনা নদীর পানি কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পর্যন্ত এসব নদীর পানি কমতে পারে। তবে পরবর্তী চার দিন ধীর গতিতে বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ওই বিভাগের তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, অন্যদিকে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন এসব নদীর পানি আরও কমতে পারে। আর দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বলা হয় বুলেটিনে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য লঘুচাপের শঙ্কায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিআইডব্লিউটিএ জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলের নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা থেকে হাতিয়া, বেতুয়া, খেপুপাড়া, চরমোন্তাজ, রাংগাবালী, মনপুরাগামী উপকূলীয় অঞ্চলের নৌপথে নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অফিসের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে।

এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল সকালে বলেন, বঙ্গোপসাগরে আগামী ২৪ ঘণ্টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে আগামীকালও দেশের সব জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপর পরশু (শনিবার) থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

গেল ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে দেশের সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া, কক্সবাজারে ১১৪, নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ১০৮, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৭৪, ফরিদপুরে ৬০, ভোলায় ৫৫, চাঁদপুর ও ফেনীতে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীমঙ্গল এবং সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বান্দরবানে ২৩ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত