ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানেও ছিল দলীয়করণ

লাইসেন্সধারী অধিকাংশই এখন আত্মগোপনে
কুমিল্লায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানেও ছিল দলীয়করণ

গত সাড়ে ১৫ বছরে কুমিল্লায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রেও দলীয়করণের তথ্য মিলেছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ওই সময়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, বিতর্কিত কাউন্সিলর, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান, হত্যা মামলার আসামি ও দলীয় বেশ কিছু ক্যাডার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন। কেউ আবার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন অস্ত্রের লাইসেন্স। কারও নামে দুইটি করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও রয়েছে। অধিকাংশ লাইসেন্স দলীয় তদবীরে দেয়া হয়েছিল। এসব লাইসেন্সধারীদের মধ্যে বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ জন তাদের অস্ত্র জমা দেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারের পতনের পর দলটির অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। জেলা-পুলিশ ও থানা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কুমিল্লার ১৮টি থানার বেসামরিক জনগণকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২০৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৫ জন অস্ত্র কেনেন নি। অপর ১৯৪ জনের মধ্যে ৯ জন ছাড়া সকলে সরকার নির্ধারিত গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যক্তিপর্যায়ে ইস্যুকৃত অধিকাংশ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নামে। এ সময়ে তারা বন্দুক, পিস্তল, শর্টগানের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। এদের মধ্যে দলীয় ক্যাডারও রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পিস্তলের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে মেঘনা ও ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। তিনি গ্রেফতারও হয়েছেন একাধিকবার।

সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সুপারিশে ২০১৬ সালে চৌদ্দগ্রামের নালঘরের মোস্তফা মনিরুজ্জামান জুয়েল অস্ত্রের লাইসেন্স পান। তার দলীয় কোন পদণ্ডপদবি না থাকলেও পরিচয় দেন যুবলীগ নেতা। এলাকায় তিনি মুজিবুল হকের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই প্রকাশ্যে রাইফেল নিয়ে প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে ভাইরাল হয়ে এলাকা ছাড়েন জুয়েল। চার দিন পর রাজধানী থেকে পুলিশ একটি প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেফতার করে। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি লাইসেন্স করা পিস্তল কোমরে রেখে ভাইরাল হন বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।

২০১৩ সালে সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নেন শর্টগানের লাইসেন্স। ২০২১ সালে পিস্তলের লাইসেন্স নেন তার জামাতা সাইফুল আলম রনি ও ভাতিজা সিটি কাউন্সিলর হাবিবুর আল-আমিন সাদী। এ সময়ে লাইসেন্স নেন প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাত, আমিনুল ইসলাম টুটুল, আবদুল্লাহ-আল মাহমুদ সহিদ, হত্যা মামলার আসামি সৈয়দ রায়হান আহমেদ, আলী মনসুর ফারুক, আহাম্মেদ নিয়াজ পাভেল, সাদেকুর রহমান পিয়াস, ঠিকাদার আবুল হোসাইন ছোটন, আইয়ুব আলী ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী শফিউল আলম, মো. রাশেদুজ্জামান, চঞ্চল কুমার ঘোষ, আবদুল মালেক ভূঁইয়া, ইউপি চেয়ারম্যান সেকান্দর আলীসহ এমপি বাহারের অনুসারী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। সাবেক এমপিদের মধ্যে লাইসেন্স নেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, আবুল কালাম আজাদ, নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, এম এ জাহের, আমির হোসেন, বেগম সেলিমা ইসলাম।

এছাড়া নাঙ্গলকোট উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু, বরুড়ার সাবেক চেয়ারম্যান এএনএম মইনুল ইসলাম, মেঘনা উপজেলার সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার, মুরাদনগরের আহসানুল আলম কিশোর, আবদুল কাইয়ুম খসরু, তিতাসের পারভেজ হোসেন সরকার, মনোহরগঞ্জের জাকির হোসেন। পৌর মেয়রদের মধ্যে আছেন নাঙ্গলকোটের আবদুল মালেক, চৌদ্দগ্রামের মিজানুর রহমান, দাউদকান্দির নাঈম ইউসুফ ও তার ভাই নাসিম ইউসুফ। দলীয় নেতাদের মধ্যে লাইসেন্স নেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বশিরুল আলম মিয়াজী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আলী আকবর, তিতাসের যুবলীগ নেতা শাকিল ইসলাম, দেবিদ্বারের মাশিকাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম, জেলা পরিষদ সদস্য বরুড়া উপজেলার জসিম উদ্দিন, তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসীন ভূঁইয়া, দেবিদ্বারের যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার গাজী রাসেল। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে ২০২১ সালে সাবেক এমপি এম এ জাহেরের ভাতিজা মোহাম্মদ আবু ছাইব বাপ্পী পেয়েছেন পিস্তলের লাইসেন্স। সদরের দূর্গাপুরের প্রয়াত ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান মারা গেলে তার স্ত্রী লুৎফুন নাহারকে ২০১৪ সালে দেয়া হয় পিস্তলের লাইসেন্স।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট থানায় আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত