ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাকরি বিধি লঙ্ঘন

নিয়মনীতি মোটেও মানছে না গণপূর্ত অধিদপ্তর

নিয়মনীতি মোটেও মানছে না গণপূর্ত অধিদপ্তর

সরকারের নির্মাণ সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতীত নিয়ে গর্ব করতেন বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। সেই অতীতের গৌরবোজ্জ্বল গল্প-কাহিনি শুনে বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটসহ বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে বিসিএস দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে চাকরি জীবন শুরু করেন। তবে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই চরমণ্ডবৈষম্যের শিকারে পড়ছেন গণপূর্তের বিসিএস প্রকৌশলীরা। সংস্থাটি সরকারি চাকরি বিবিমালা লঙ্ঘন করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দিচ্ছে এবং মেধার মূল্যায়ন বিঘ্নিত হওয়ায় চাকরিজীবনের অর্ধবেলায় এসে গণপূর্ত অধিদপ্তর ছাড়ছেন অনেক বিসিএস প্রকৌশলী।

জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে মোট ২৯৬টি পদ রয়েছে, সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ অনুসারে যার এক-তৃতীয়াংশ পদ বা ৯৯টি পদ পদোন্নতির (উপ-সহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী) মাধ্যমে এবং ১৯৭টি পদ বিসিএসের মাধ্যমে পূরণযোগ্য। একইভাবে সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) পদে মোট ১২৪টি পদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পদ বা ৪২টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৮২টি পদ বিসিএসের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু সরকারি চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করে বছরের পর বছর অতিরিক্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দিচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এতে বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত থাকছেন। যা নিয়ে এর মধ্যেই গণপূর্ত অধিদপ্তরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী বলেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নির্ধারিত পদের চেয়েও অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়ার পেছনে মোটা অংকের লেনদেন রয়েছে। এবারো গণপূর্ত অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে বিসিএস নিয়োগপ্রাপ্ত পদগুলোয় (সিভিল ও ই/এম) সহকারী প্রকৌশলী পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দেয়ার পায়েতারা করছেন। অন্যদিকে কর্মচারী সমিতি বলছে, অযথাই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে।

গণপূর্তের প্রকৌশলীরা বলছেন, নিয়োগ বিধিমালায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে শূন্য পদে লোক নেয়া যাবে। কিন্তু সেটি না করে বিধি ভেঙে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এই ঘটনাকে অনিয়ম উল্লেখ করে তার প্রতিকার চেয়ে ৪১তম বিসিএস প্রকৌশলীরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে একটি চিঠি দিয়েছে। তাতে তারা বলেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এখানে সিভিল ২১ ও ই/এম ২৩ মোট ৪৪ জন অতিরিক্ত থাকার পরও আরো ২২ জনের পদোন্নতির পাঁয়তারা করছে। যার মাধ্যমে গণপূর্তে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাপে আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়বেন বিসিএস প্রকৌশলীরা। ফলে এরই মধ্যে যেসব পদোন্নতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তা রহিতকরণ এবং পূর্বে সরকারের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে যেসব পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বিসিএস প্রকৌশলীরা।

বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ রায়হান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সহকারী প্রকৌশলী শূন্যপদ দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) চাহিদা পাঠায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী যেসব পদে চলতি দায়িত্বে থাকেন, সেসব পদশূন্য দেখিয়ে পদোন্নতির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নির্ধারিত শূন্যপদের চেয়ে বেশি পদোন্নতি পেয়েছেন- বিসিএস প্রকৌশলীদের এমন দাবির বিষয়ে মোহাম্মাদ রায়হান বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরে ১০০টি শূন্যপদ থাকলে ৬৬টি বিসিএস প্রকৌশলীরা পাবেন, আর ৩৪টি শূন্যপদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা পাবেন। ওই কোটা অনুযায়ী ডিপ্লোমারা পদোন্নতি পেয়েছেন। বর্তমানে গণপূর্তে বেশকিছু সহকারী প্রকৌশলী পদ শূন্য থাকায় ডিপ্লোমাদের পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ডিপ্লোমাদের ২১ জন অতিরিক্ত পদোন্নতি পেয়েছে, এটি তাদের (বিসিএস প্রকৌশলী) তথ্য, তবে আমাদের (ডিপ্লোমা) তথ্য, আমরা এখনও কম আছি। ডিপ্লোমাদের পদোন্নতির ফাইল মন্ত্রণালয়ে আছে, ওই ফাইল সঠিক আছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকেই মন্ত্রণালয়ে ফাইলটি পাঠানো হয়। ফাইল সঠিক না হলে, অধিদপ্তর ফাইল পাঠাতো না। যা মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে। সবপক্ষকে ঢেকে মন্ত্রণালয়ে মিটিং হতে পারে।

তবে সরকারি চাকরির গেজেটে বলা হয়েছে, শূন্যপদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য সকল প্রকৃত শূন্যপদ নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করিতে হইবে এবং লিয়েনজনিত অথবা চলতি দায়িত্বের কারণে সৃষ্ট শূন্যপদে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে পদোন্নতি প্রদান করা যাইবে না। শূন্যপদে চলতি দায়িত্ব থাকার পরেও নিয়ম ভেঙে শূন্য দেখিয়ে ডিপ্লোমাদের পদোন্নতি দিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অভিযোগ উঠেছে, এই পদোন্নতির জন্য কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিসিএস প্রকৌশলীরা এ জন্য গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।

আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন গণপূর্তের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গণপূর্তে অনেক পদ খালি। কাজে গতি আনার স্বার্থেই তাদের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই পদগুলো শূন্য থাকায় ডিপ্লোমাদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে।

বিসিএস প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদোন্নতির বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব মো: হামিদুর রহমান খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রকৌশলীদের পদোন্নতি নিয়ম মেনেই দেয়া হবে। নিয়মের বাইরে প্রকৌশলীদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত