প্রথমবারের মতো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তৈরি হয়েছে একটি মাছির নিউরোন ও তাদের মধ্যে পাঁচ কোটি সংযোগের থ্রিডি মডেল। এর ফলে এই প্রথম বিজ্ঞানীরা এমন কোনো প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক দেখতে পারছেন যেটি হাঁটতে ও উড়তে পারে। এটি আগের প্রচেষ্টার তুলনায় বিরাট অগ্রগতি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। আরো বড় মস্তিষ্ক নিয়েও একইরকম গবেষণার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে এটি, যার মধ্যে শেষ পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্ক থাকবে বলেও বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করেছেন। একটি মস্তিষ্ক আসলে কীভাবে কাজ করে তার মৌলিক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে নতুন ব্যাখ্যা দিতে পারে এ প্রকল্প।
এরইমধ্যে গবেষণাটি থেকে যে ইঙ্গিত মিলছে, তা হলো- যতটা ধারণা ছিল বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কে তার চেয়েও বেশি মিল থাকতে পারে।
নতুন ম্যাপ করা মস্তিষ্কটি আগের ছোট গবেষণার সঙ্গে তুলনা করে গবেষকরা দেখছেন, ছবিগুলোয় যথেষ্ট মিল রয়েছে; এবং প্রতিটি মস্তিষ্ক একেবারেই স্বতন্ত্র কাঠামোর বিষয়টি এমন নয় বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
‘মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে আমরা তা বুঝতে হলে, যান্ত্রিক উপায়ে বুঝতে হবে কীভাবে সব নিউরন একসঙ্গে যুক্ত হয় ও আপনাকে ভাবতে দেয়। বেশিরভাগ মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে এ নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে তার কোনো ধারণা আমাদের নেই।’
বলেছেন, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেগরি জেফরিস। ‘হাঁটা, ওড়া, ন্যাভিগেট করার মতো সব ধরনের জটিল কাজ মাছি করতে পারে, এমনকি ছেলে মাছিরা মেয়েদের গান গেয়েও শোনায়। আমাদের যাতে আগ্রহ সেসব বোঝার জন্য প্রথম ধাপ হলো ব্রেইন ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম, যেমন কীভাবে আমরা গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করি, টেলিফোনের উত্তর দেই বা বন্ধুকে চিনতে পারি।’
মস্তিষ্কের এ মানচিত্রটি তৈরি করা হয় মাছির মস্তিষ্ক নিয়ে, যা নিজেই এক মিলিমিটারেরও কম চওড়া। সেটিকে সাত হাজার টুকরো করে কেটে তারপর স্ক্যান করা হয়। গবেষকরা ১০০ টেরাবাইটের বেশি ছবি স্ক্যান করতে এআই ব্যবহার করে তৈরি করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার নিউরোন ও তাদের মধ্যে পাঁচ কোটি সংযোগের এ মানচিত্র। সব মস্তিস্ককে আরো ভালোভাবে বোঝার আশায় এ গবেষণায় সম্পূর্ণ ডেটাবেইজ অন্য গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একটি সুস্থ মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা বুঝলে, মস্তিষ্ক ভিন্ন পরিস্থিতি, যেমন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেলায় কীভাবে কাজ তা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। ‘নিউরোনাল ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম অফ এ অ্যাডাল্ট ব্রেইন’ এবং ‘হোল-ব্রেইন অ্যানোটেশন অ্যান্ড মাল্টি-কানেকটোম সেল টাইপিং অফ ড্রসফিলা’ শীর্ষক দুটি নতুন গবেষণায় মস্তিষ্কের এ ম্যাপটি বর্ণনা করা হয়েছে, যা ‘নেচার’ সাময়িকীতে প্রকাশ পেয়েছে।