গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির দাবিতে রাস্তায় নেমেছে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ। গতকাল সোমবার গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বর্ষপূর্তিতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের শতাধিক শহরে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা। তারপরও গাজা ও লেবাননে অভিযান রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে গতকাল সোমবার সরকারি টেলিভিশন ভবনের বাইরে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জড়ো হয় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা কট্টর ডানপন্থি খ্রিষ্টান গ্রুপ ডেস্টিনি চার্চের সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন, যারা দুই দলকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরে তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার-স্প্রে করে। এর আগে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুদ্ধবিরতি, সংযম ও উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়ে যাবে তার দেশ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি উপশহর লাকেম্বায় দেশের বৃহত্তম মসজিদের বাইরে দুপুরে সমাবেশ করেন ফিলিস্তিনপন্থি জনতা। দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে রাস্তা ও ফুটপাথে দাঁড়িয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে মিছিল ও বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। করাচি, লাহোর, পেশোয়ার, কোয়েটা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, সারগোধা, হায়দ্রাবাদসহ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী একাধিক বিক্ষোভণ্ডসমাবেশের আয়োজন করে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী ও এমনকি শিশুরাও ছিলেন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা গান গেয়ে এবং স্লোগান দিয়ে গাজা যুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া আরো কিছু বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় রবিবার এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী মার্কিন দূতাবাসের বাইরে সমবেত হন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানান। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে দশ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে সমবেত হন। ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান তারা। মরক্কো ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল। তুরস্কের ইস্তানবুল এবং আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ গাজা ও লেবাননের সমর্থনে মিছিল করেন। ভ্যাটিকানে, পোপ ফ্রান্সিস গাজা ও লেবাননে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ আহ্বান জানান। মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। শনিবার নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করেন। তাদের অনেকেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের ছবি বহন করছিলেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের বাইরে এক হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করার সময় এক ব্যক্তি নিজের গায়ে আগুনে ধরিয়ে দেন। এ সময় ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় শহরেও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।