ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এখনো অস্থিতিশীল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য!

এখনো অস্থিতিশীল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য!

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহ আন্দোলন-পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই কেটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় ব্যবসায়ীরাও অনেকে ছন্নছাড়া। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে আবার হানা দেয় ভয়াবহ বন্যা। সব মিলিয়ে দুই মাস কেটে গেলেও এখনো অস্থিতিশীল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ২ মাস অতিক্রম করলেও পুরোপুরি গতি ফেরেনি ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়। রাজধানীসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজার এখনো চলছে ঢিলেঢালা। রয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ। বিপণন ব্যবস্থায় আছে ঘাটতি। এ অবস্থায় বিক্রি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরপরই বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একটি বড় অংশের মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়েছেন কেউ কেউ, কাজ হারানোর আতঙ্কে আছেন বহু কর্মী। তারা বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে রপ্তানির বাইরে অন্য পণ্যের পরিবহন ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। এখনো সারা দেশে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানার গুদামে পণ্য জমছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই কমিয়ে দিয়েছে উৎপাদন। ফলে কমছে আমদানিও।

দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরুর আগেও ভোগাচ্ছিল গ্যাস সংকট। এসব সংকট কিছুটা কাটিয়ে উৎপাদনে ফিরেছে কারখানাগুলো। তবে আগের গতানুগতিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন সমস্যা।

দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারনির্ভর পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারখানার উৎপাদন শুরু হলেও আমদানি হওয়া কাঁচামাল আসা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কাঁচামাল সংকট রয়েছে। এছাড়া বিক্রি কমে যাওয়া, ডলারের ঘাটতি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংক খাতে অস্থিতিশীলতা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের অভাবের কারণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তারা। চলমান পরিস্থিতিতে নানা ধরনের সমস্যার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে দেশে বেশ কিছু শিল্পগ্রুপের কারখানা এখন বন্ধ। সেসব কোম্পানির পণ্য সরবরাহ হচ্ছে না। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।

এছাড়া পর্যটন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্য খাতের মন্দার প্রভাব ভোগ্যপণ্যের বাজারে পড়ছে জানিয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেছেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে রয়েছে এখনো। ট্যুরিজমণ্ডহোটেল-রেস্তোরাঁ কোনো কিছুতে মন্দা কাটেনি। মানুষ এখনো ঘর থেকে বের হচ্ছে না সেভাবে। বিদেশিরাও নেই এখন দেশে। এসব পরিস্থিতি আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবকিছু স্বাভাবিক না হলে ব্যবসা স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়।’

ভোগ্যপণ্যের বাজারে একটি বড় কোম্পানি এস আলম গ্রুপ। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে এস আলমের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের পণ্যের সরবরাহ নেই বাজারে।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আলী ভুট্টো বলেন, ‘এস আলম বাজারে নেই। এটা একটি সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা এখন। তেলের সরবরাহ কম, বিক্রিও কম।’

বাংলাদেশ পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির আহম্মেদ বলেছেন, ‘ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা তোলা যাচ্ছে। এ কারণে লেনদেন একদম কমে গেছে। কেউ বড় লটে পণ্য কিনছে না। পাইকারি কারবার এখনো ২০ শতাংশ হচ্ছে না। এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরো বিপদে ফেলেছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত