ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

মাঠে মাঠে দুলছে আগাম জাতের পাকা ধান

মাঠে মাঠে দুলছে আগাম জাতের পাকা ধান

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ, আগাম জাতের পাকা ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। আগাম জাতের কৃষি মাঠে পুরোদমে ধান পেকে গেছে। জেলায় স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। আগাম ধান পেয়ে খুশি কৃষক। এদিকে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ায় কার্তিক মাসে শ্রমহীন থাকতে হচ্ছে না কৃষি শ্রমিকদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধদিফতর রংপুর সূত্রে জানা যায়, এবারে রংপুর জলোয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হক্টের জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আগাম ধান কাটা শেষে আগাম জাতের আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করবেন চাষিরা। এজন্য আগাম ধান কাটছে তারা। ইতোমধ্যে ১৫০ হক্টের জমির আগাম ধান কাটা হয়েছে। এই স্বল্পময়োদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান রোপণে ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই ধান পাকে। এই আগাম ধান কাটার পর আলুসহ নানারকম রবিশস্য আবাদ করে থাকেন চাষিরা। সেই লক্ষ্যে মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ উপজেলা, সদর উপজলো, গংগাচড়াসহ কয়েক উপজেলায় এই আগাম ধানের চাষ বেশি হয় থাকে। পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের কৃষি পল্লীতে কিছু কিছু ধান খেতে সোনালি রং ধরেছে। আগাম জাতের ধানের ফলন আর কৃষি মাঠে পাকা ধানের সুগন্ধে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। পোকামাকড়ের বালাই অনেকটাই কম আর ধান অসময়ে ফলনের কারণে উপজেলার অনেক কৃষকদের মধ্যে চাষের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৭৫, বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ৭, ব্রি ধান ৮৭ এবং হাইব্রিডসহ ১২টি জাতের ধান এবছর ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগাম জাতের ধান ইতিমধ্যে চাষিরা কাটা মারা শুরু করেছে। কৃষি পল্লি এলাকা ঘুরে ধান চাষিদের সাথে কথা হলে তারা বলছেন, কম সময়ে ফলন বেশি এবং কম খরচে আগাম জাতের ধান রোপণ করে ভালো ফলন পাবার সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। আগাম ধান কেটে সঠিক সময়ে সরিষা এবং সবজি চাষ করবে। তবে অনেকেই ধারণা করছেন এবার আগাম জাতের ধানের ফলন ভালো হবে। ধান চাষি বড় ভগবানপুর গ্রামের মিলন মিয়া, জাদবপুর গ্রামের মোত্তালিব হোসেন, অনন্তরামপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন বলেন, তারা প্রতিবছর আগাম জাতের ধানের চাষাবাদ করে থাকেন। বৃষ্টি পানির অপেক্ষায় না থেকে সেচ পাম্পের পানি সেচ দিয়ে এই ধানের চাষ করে চাষাবাদ করে। তারা ইতিপূর্বেও লাভবান হয়েছে। এতে করে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হয় না। গোখাদ্য খড় ব্যবসায়ীরা জমি থেকে ধান কাটা মাড়াই করে ঘরে উঠিয়ে দেয়, খরচ অনেক কম হয়। তাছাড়া নতুন ধানের চাল বাজারেও অনেক চাহিদা রয়েছে। এসব ধান কেটে দ্রুত তেলজাতীয় ফসলের আবাদ করতে পারবে তারা। বর্তমানে কৃষকদের মাঝে এ ধান চাষের ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে তবে আগাম ধরনের উপর পাখিদের নজর বেশি। বাবুইসহ কয়েক প্রকারের পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে খেতে এসে আহার করে। যে কারণে বাড়তি খরচ করে জমির উপর জাল টানিয়ে দিতে হয়।

রবিশষ্যের জন্য বিখ্যাত মিঠিপুকুর এলাকার আবুল মিয়া বলনে, এলাকার অনেকেই অন্যান্য ধান রোপণ করলেও আমি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম ধান চাষ করেছি। এরই মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করছে। সচেতন মহলের লোকজন জানান, এ অঞ্চলের কৃষক অনেকটাই শ্রমজীবী কর্মমুখি তারা শ্রম খাটিয়ে মাটিতে ফসল ফলিয়ে থাকেন। চাষাবাদে কৃষক সফল এবং উপজেলায় সব ধরনের ফসল চাষের উপযোগী বলে তারা বলছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার বোরো পতিত রোপা আমন শস্য বিন্যাসে সরিষা ফসল চাষাবাদে বিগত বছর থেকেই কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য স্বল্প মেয়াদি ধানের জমিতে আগাম চাষাবাদ, বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে সঠিক সময়ে আমন ধানের রোপণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, মাঠদিবস, কৃষক মতবিনিময় সভায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ একদিক যেমন আগাম রোপা আমন ধান ফসলের স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি। অন্যদিকে উপজেলায় সরিষাসহ তেল জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, এরইমধ্যে ১৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। মূলত আলু ও অন্যান্য রবিশষ্যের জন্য কৃষকরা এখন আগাম ধান চাষ করে থাকে। আর নিয়মিত যে আমন ধান, সেই ধানেও অনেক এলাকায় পাকতে শুরু করেছে। এই মাসের শেষ দিকে কাটা শুরু হবে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত