ঢাকা ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সেমিনারে উপদেষ্টা সাখাওয়াত

সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে

* নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা আমাদের নেই : ইসি সংস্কার প্রধান * সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে : আলাল * ইসির নিবন্ধন প্রথা বাতিল চাইলেন সাবেক শিবির সভাপতি
সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র, পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই দায়দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু, অনেক রক্ত ঝরেছে। ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, তারা বলেছে কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি, তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সকাল ১০টায় ‘নির্বাচন কমিশনে কেমন সংস্কার চাই’ এই শিরোনামে সেমিনারের আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আলোচনায় অংশ নেন। উপদেষ্টা বলেন, ডিসিরা নির্বাচন করে এই কথা ঠিক না, আইনে ৩০০ আসনে ৩০০ রিটানিং অফিসার দেয়া যাবে, আবার ডিসিদের দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। নির্বাচন কমিশনকে ভোটের সময় সরকারের ওপর কিছুটা খবরদারির এখতিয়ার দিতে হবে। তিন ধাপে ইসি নিয়োগ করা যেতে পারে। তৃতীয় ধাপে পার্লামেন্ট থেকে চূড়ান্ত প্রস্তাব যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে, প্রথম ধাপে সকলের নামই প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, দলের প্রার্থী হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে। তৃণমূলে এক দুই বছর থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এছাড়া নারী প্রার্থী ৫০ জন বা ১০০ জন, যাই করেন সেটা সরাসরি নির্বাচন করেন। সংরক্ষিত আসনে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। তবে এটা করবেন কি না, সেটা আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন।

নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা করবে অন্তর্বর্তী সরকার, আমাদের সেই এক্সিকিউটিভ পাওয়ার নেই, আমাদের এখতিয়ার হলো- কতগুলো সংস্কারের সুপারিশ করা, আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো এখতিয়ার নেই।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটা আলাপ-আলোচনা হতে পারে, আমাদের কতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে, ভোটার তালিকা করতে হবে। রাজনৈতিক দল সকলেই মতামত ব্যক্ত করুক। কিছু সংস্কারের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সংবিধান সংস্কার বিষয়ক কমিশন দেখবে, আমরাও দলগুলো কাছ থেকে প্রস্তাব নেবো, সংখ্যানুপাতিক ভোটের জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে সেভাবে প্রস্তাব করব।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। ভোটার তালিকা থেকে শুরু হয়, এরপর মনোনয়ন বাছাই, প্রচার, ভোটগ্রহণ। এই প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এজন্য ইসিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, পুরো প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতীয়মান হতে হবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিকভাবে বাতিল করা হয়েছিল, এটা করা হয়েছি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এজন্য নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার, সে যেভাবে হোক, সরকার সাথে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী যেন নিরপেক্ষ আচরণ করে। এরপর হলো দল। দল যদি দায়িত্বশীল না হয়। তারা যদি ছলে বলে কৌশলে, টাকার খেলা করে, পেশি শক্তির ব্যবহার করে, গণমাধ্যম যদি সঠিক খবর না দেয় তাহলে সঠিক নির্বাচন ব্যাহত হয়। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাতেই থেকে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত থাকতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। টাকা দিয়ে, পেশি শক্তি দিয়ে যদি ভোটে জিততে চাই, তাহলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই থাকবে। তাই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সততা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্বের সাথে আমরা আমাদের প্রস্তাব উত্থাপস করব।

সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি কিন্তু অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, অস্বচ্ছতা, রাষ্ট্র এবং সরকারের বিষয়টি আলোচনা করা প্রয়োজন। নির্বাচন পদ্ধতি চালু হবার পর থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বারবার বলা হয়েছে। রাষ্ট্র ও সরকারকে একাকার করলে যে দুরবস্থা হয়, সেটাই হয়েছে বাংলাদেশে।

ঐক্যমত শব্দটা আপেক্ষিক দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপির ওপরে অনেক দায়িত্ব। সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি কিন্তু অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচিত হলেও পরে অন্যান্য দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। আমাদের সমস্যা অনেক জায়গায়। সব জায়গায় কিছু কিছু নতুন জিনিস সংযুক্ত দরকার।

রুল অফ ল’ না রুল অফ জাস্টিস হওয়া উচিত হয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল আছে তারা সব আসনে প্রার্থী দেন না। সারাদেশ থেকে সব প্রার্থী এনে সেই আসনে জমা করে। নির্বাচনচলাকালীন সময়ে উচ্চ আদালতে সাবেক কমিশনের মতামত না নিয়ে কোনো রিট গ্রহণ করা হবে না বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

শিবির সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসির নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছি। সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক ভোট চেয়েছি আমরা। জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের জন্য সংবিধানে সংশোধন এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফেরত আনা। তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনের হওয়া নির্বাচন অন্যন্য নির্বাচনের চেয়ে জনগণের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রথা বাতিলের পাশাপাশি একাধিক দিনে নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। ডিজিটালা মেশিন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে ভোট করতে পারবেন না। স্থানীয় সরকারের দলীয় প্রতীক প্রথা বাতিল করতে হবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কমিশন নিজেই কমিশন। বদিউল আলমকে সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে দিলে পারত। দুজনের ব্যাপারে আপত্তি জেসমিন টুলী ও আব্দুল আলীমের, তবে এ তথ্যগুলো অসত্য। সংস্কার শব্দটা বড় করে দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনি যে কাঠামো আছে, এগুলো ব্যবহার করে স্বচ্ছ নির্বাচন করা যায়। সংস্কারের চেয়ে কুসংস্কারের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। প্রার্থীরা পছন্দের ডিসি এসপি নেয়ার জন্য তদবির করে। কেন্দ্রভিত্তিক দখলদারিত্ব ও ডামি প্রার্থী দেয়া এগুলো ইলেকশন রিগিংয়ের ছোট ছোট পয়েন্ট। এবারের ইলেকশন বাংলাদেশ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত