চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা
যে কারণে পুরুষের ৩৫ নারীর ৩৭ করার সুপারিশ
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। একই সঙ্গে কেন এই সুপারিশ করা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েদের একটু আলাদা করে বেশি বয়স দেয়া হয়েছে। মেয়েদের আমরা এই কারণে দিয়েছি যে, মেয়েদের ছেলেদের মতো ওই বয়সে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অব্লিগেশন্স থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চা-কাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারেন। এছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনো। সেজন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি, যেন নারীরা এ সুবিধাটা পায়, তারা আসতে পারে।’
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘৩৫ বছর (চাকরিতে প্রবেশে) সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে নারীদের জন্য আমরা দুই বছর বাড়িয়ে ৩৭ বছর সুপারিশ করেছি। এটা করেছি কারণ আরও বেশি সংখ্যক নারী যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, আসতে পারে, পরীক্ষা দিতে পারে, চাকরি-বাকরিতে আসতে পারে।’ কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও দেখেছি। বিভিন্ন দেশে যে বয়সসীমা আছে সেটা সঙ্গে আমাদের সুপারিশ সংগতিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা কিছু নয়।’ ‘আমি শুনেছি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে, এ বিষয়ে ওনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এমন সুবিধা আছে, সেজন্য আমরা এটা করেছি। আমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি।’ বলেন তিনি।
সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বিষয়ে কমিটি কোনো সুপারিশ করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যাদের বিষয়ে সুপারিশ করলাম, তারা চাকরি করে অবসরে আসতে অনেক সময়। এর মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’ মুয়ীদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘এখন যারা অবসরে যাবেন, তারা আগের বয়স অনুসারে চাকরিতে ঢুকেছেন, তাদের অবসরের ক্ষেত্রে তো কোনো অসুবিধা নেই। আগামী ৮-১০ বছর পর্যন্ত তো তারাই অবসরে যাবেন। এটা নিয়ে এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কারণে তাদের ওপর তো কোনো প্রভাব পড়ছে না।’ ‘যাদের বয়সের সুপারিশ আমরা করেছি, তারা এখনো চাকরিতে ঢোকেইনি, জন্মই গ্রহণ করেনি। তারা চাকরিতে ঢোকার পর চাকরি করলে তখন কী করতে হবে, সেটা সরকার সেই সময় সিদ্ধান্ত নেবে।’ যোগ করেন এই উপদেষ্টা। চাকরিতে অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়ে কোনো ক্ষোভ হবে না বলেও জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। ?
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনরতরা। তাদের সরিয়ে দিতে কাঁদানো গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এরপরও তারা সেখানে অবস্থান নেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ওইদিনই চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সদস্যসচিব। কমিটিতে সাবেক যুগ্মসচিব কওছার জহুরা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল ও তখনকার অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সদস্য হিসেবে ছিলেন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কমিটি গত ৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করে।