বিশ্বব্যাংক
কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে বাংলাদেশের সামনে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থান তৈরি করা। তবে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় একদিকে দেশের বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমেছে, অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় আরো বেশি নতুন ও শোভন চাকরির সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটের অক্টোবর সংখ্যায় বিশ্বব্যাংক এসব কথা বলেছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এর পেছনে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কারণ দায়ী বলে জানিয়েছে তারা। পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক আরো বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এতে বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ওয়াশিংটন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা, অর্থনীতিবিদ নাজমুস খান ও জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা ও বহিস্থ খাতের চাপ। এছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির তথ্য এলেও তা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবক ও নারীদের অনেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি খুঁজে পান না। আর সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের শিল্প ও সেবা খাতের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোর দিকে। তবে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভালো ইতিহাস রয়েছে বলে জানান আবদুলায়ে সেক। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, সরকার দেশের আর্থিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নত করতে জরুরি ও সাহসী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে দেশ লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসতে পারবে।’ মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। তবে সরকারের নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে নিকট ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে বেড়ে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। আর চলতি অর্থবছর শেষে এটি আবার ৯ শতাংশ নেমে আসবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানান বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির সূচকের ৪৫ শতাংশই হিসাব করা হয় খাদ্যপণ্যের দাম দিয়ে। ফলে খাদ্যের দাম বাড়ায় তা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কর্মসংস্থানে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার প্রায় ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতের। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিবছর উৎপাদন খাতে গড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিপরীতে এ খাতে প্রতিবছর কর্মসংস্থান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে কমেছে। বেশির ভাগ, প্রায় সাড়ে ৪৫ শতাংশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে কৃষি খাতে। এ খাতে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানই হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক ও নিম্ন মজুরির। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহ- উভয় দিক দিয়েই চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এসএমই খাতের। ফলে তারা অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়, ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় কম। অন্যদিকে খাতভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদেরও অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের জন্য ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র তৈরির দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।