মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের আইনের ১২(১)(গ) ধারার ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কমিশন দেশের কারাগার বা সংশোধনাগার, হেফাজত ইত্যাদি স্থান পরিদর্শন করে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিশন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ ও ২, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ জয়পুরহাট, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কারাগার পরিদর্শন করে সরকারকে সুপারিশ প্রদান করেছে। সম্প্রতি কারা অধিদপ্তর একটি সভায় কমিশনের সুপারিশসমূহ মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কারাগার পরিদর্শনকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কারাবন্দিদের অধিকার, বন্দি ব্যবস্থাপনা, আবাসনের মান, খাবারের মান, স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা-ব্যবস্থা, কারাগার কর্তৃপক্ষের নেয়া প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, কারাবন্দিদের অপরাধমূলক মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে সংশোধনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণসহ কারাগারের সামগ্রিক পরিবেশ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে। কমিশন পরিদর্শনকালে সরেজমিন কারাবন্দিদের সাথে কথা বলে এবং সার্বিক সুরক্ষার জন্য সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনে। পাশাপাশি, কারাবন্দিদের তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে অবহিত করে। পরবর্তীকে সার্বিক বিষয় বিবেচনাপূর্বক সরকারকে সুপারিশ প্রদান করে। কমিশন মনে করে দেশের কারাগারগুলোকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে সংশোধনাগারে পরিণত করা একান্তই প্রয়োজন। এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কারাগারগুলো সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করতে সঠিক পদ্ধতিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কারাগারে বন্দিদের মাঝে নিয়মিত শুদ্ধাচার ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে অপরাধ সম্পর্কে উপলব্ধি ও অনুতপ্ততার পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এক্ষেত্রে, শুদ্ধাচার চর্চা অব্যাহত রেখে তাদের উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত রাখলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। কারাগারে সুন্দর পরিবেশ, উন্নত খাদ্য, চিকিৎসাব্যবস্থা ও কয়েদিদের সকল অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, কারাগারের পাঠাগারগুলোও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। পাঠাগারগুলো মানবিক চরিত্রের বিকাশ এবং উন্নত পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রতি কারা অধিদপ্তরের একটি সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কারাগার পরিদর্শন প্রতিবেদনসমূহের পরামর্শ ও সুপারিশের আলোকে কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তন্মধ্যে কারা অধিদপ্তর ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের সম্পর্কে একটি বছরভিত্তিক বিশেষ ডাটাবেজ তৈরিকরণ, কারা অধিদপ্তর কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ, উক্ত প্রকল্পের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করা ইত্যাদি। সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে সেগুলো ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে কমিশন মনে করে।
কমিশন বিশ্বাস করে গৃহীত সুপারিশসমূহ দ্রুতই কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় তা তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।