তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া রায় বাতিল চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছেন। আবেদনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার পক্ষে ১০টি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। ৮০৭ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনটি আগামী রোববার (২০ অক্টোবর) আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হবে। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে ওই সংবাদ সম্মেলনে মামলার আবেদনকারী মির্জা ফখরুলের পক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জয়নুল আবেদীন। ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান জয়নুল আবেদীন। এসব যুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যমজ সন্তানের মতো, একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। এ রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তিগুলো তুলে ধরে এ আইনজীবী আরো বলেন, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিমকোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা, যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিমকোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারেন না। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির কাঁধে ফ্যাসিবাদ ঝেঁকে বসে। তিনি বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এসব নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংসদে বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। আদালতে ঘোষিত রায়ের সঙ্গে প্রকাশিত রায় ভিন্ন ছিল। যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। সংবাদ সম্মেলেনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। মা, মাটি ও মানুষের দল বিএনপি জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে।
এসময় ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল ও অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।