একমাসে সড়কে ঝরলো ৪৯৮ প্রাণ

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ৪৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৯৮ জন নিহত এবং ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি। এতে নিহত ১৯৫, আহত হয়েছেন ১৪৯ জন। এটা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৯৪, নিহতের ৩৯ দশমিক ১৫ এবং আহতের ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মাসে রেলপথে ৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত, চারজন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত, ৫৬ জন আহত এবং ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৪৭টি দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩৮ জন আহত হন। সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে ১১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৯ জন নিহত এবং ২৫১ জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এ বিভাগে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৪৮ জন আহত হন। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৯ জন চালক, ৮৭ জন পথচারী, ৪৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫১ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক, ৬৮ জন নারী, ৫৬ জন শিশু, দুইজন চিকিৎসক এবং আটজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- চারজন পুলিশ সদস্য, দুইজন সেনা সদস্য, একজন আনসার সদস্য, ৯৪ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৮৬ জন পথচারী, ৫২ জন নারী, ৪১ জন শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ১২ জন শিক্ষক, দুই জন চিকিৎসক, আট জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এসময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৯২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা গেছে, ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বাস, ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বিভিন্ন কারণে, শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ ট্রেন যানবাহনে সংঘর্ষ এবং চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৫ দশমিক ২৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো ১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল।

২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। ৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার কারণে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা। ৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন। ৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।