ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম অধ্যায়ের সমাপ্তি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম অধ্যায়ের সমাপ্তি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হলে নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দের কথা থাকলেও বিগত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে কোন গণরুমে থাকতে হয়েছে। মূলত রাজনৈতিক ব্লকের নামে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের জোরপূর্বক রুম দখল, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চারজনের কক্ষ এক বা দুজনে দখল করে রাখা, ছাত্রত্ব শেষ হলেও বছরের পর বছর হলে অবস্থান করা, এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় আসন বণ্টন না হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকা সহ বিভিন্ন কারণে বছরের পর বছর ধরে এই কৃত্রিম সংকট বিরাজ করে আসছিল। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর এই চিত্র পাল্টে গেছে। আবাসিক হলগুলো থেকে বিলুপ্ত হয়েছে গণরুম। ক্লাস শুরুর আগেই নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম। তাই বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাম্পাসে এসেছেন নবীন শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে এক আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনে আবাসিক হলে আসার মিশ্রিত হওয়ায় এই আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে র‌্যাগিং, মাদক ও গণরুমবিরোধী র‌্যালি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা নবীন শিক্ষার্থীদের এই আনন্দকে অন্যন্য করে তুলেছে। এর আগে নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক এক অফিস আদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও পোষ্যদের আবাসিক হল ছাড়তে পাঁচ কর্ম দিবস সময় বেঁধে দেয় প্রশাসন। পাশাপাশি হল ত্যাগ না করলে প্রচলিত নিয়মে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করা হয়। মূলত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর পূর্বে আবাসিক হলে আসুন নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য সদ্য খালি হওয়া কক্ষসমূহ প্রস্তুত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল সকালে কয়েকটি হলে কলম বিতরণ ও মিষ্টি মুখের মাধ্যমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছে হল প্রশাসন। হলগুলোতে আমার প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আসন নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান হল কর্তৃপক্ষ। শেখ হাসিনা হলে আসন বরাদ্দ পাওয়া নবীন শিক্ষার্থী নাবিলা হারুন বলেন, গতকাল থেকে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। তার ঠিক একদিন আগেই আমরা হলে উঠতে পেরেছি। গণরুম জটিলতা, র‌্যাগিং নিয়ে ভয় বা সংশয় থাকলেও এর কিছুই হয়নি বলে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েছি। আমরা নির্ধারিত হলে আসার কিছুক্ষণ পরেই কোন ঝামেলা ছাড়া সিটে উঠতে পেরেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী শুরুর দিন থেকে নিজ নিজ আসনের দাবি রাখে। এবছর কোনো শিক্ষার্থী যেন সংকটে না থাকে সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কঠোর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ৫৩ বাচকে হলে উঠানোর মধ্য দিয়ে একটি নতুন মাইল ফলক তৈরি হলো। বিগত বহু বছর ধরে যে কোন রুমের সংস্কৃতি ছিল আমরা তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছি। প্রতিটি শিক্ষার্থী হলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের সিট পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে প্রথম দিনেই সিট পাবে এটা তাদের অধিকার। গণরুম বিলুপ্ত করে আমরা যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছি তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি র‌্যাগিং ও মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিতে চাই। আমাদের কোনো শিক্ষার্থীই যেন র‌্যাগিংয়ের শিকার না হয় এবং মাদকের ভয়াল থাবায় না জড়ায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত