দুধ-মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা চান খামারিরা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেইরি ও ফ্যাটেনিং খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল কৃষির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে কৃষি বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ৪০ পয়সা এবং গরুর ফার্মে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে ১৪ টাকার কথা উল্লেখ করেছে তারা।

গতকাল রোববার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, দেশে দুধ ও মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংস জোগান দিতে খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের দেশের খামারিরা সম্পূর্ণ নিজের পকেটের টাকা দিয়ে দুধ ও মাংস উৎপাদন করে কিন্তু এর বিপরীতে ইউরোপীয়, আমেরিকার বা ভারতের খামারিদের জনগণকে সাশ্রয়ীমূল্যে দুধ ও মাংস খাওয়ানোর জন্য সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। যে কারণে খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না আবার জনগণও সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ডিম মাংস খেতে পারে। আমাদের বিষয়ে এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। ৫০ থেকে ৯১ পার্সেন্ট পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া ইউরোপীয় ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের কারণে আমাদের দেশের খামারিরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ আমাদের খামারিরা সম্পূর্ণ নিজের খরচে দুধ উৎপাদন করে কিন্তু ইউরোপীয় খামারিরা একই দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য অর্ধেকের বেশি উৎপাদন খরচ সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়।

তারা আরো বলেন, আরও ভয়ের ব্যাপার এই যে ভারতে সরকারি বেসরকারি সব ব্রিডিং স্টেশনে সেক্সিং টেকনোলজি স্থাপিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে শুধু বকনা বাছুর হবে, ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের স্থানীয় ষাঁড় বাছুরের উৎপাদন অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভারত থেকে আর ষাঁড় বা ষাঁড় বাছুর আসবে না। আমরা যদি সঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে সেই সময়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ না করি তবে এই সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। একই অবস্থা গুঁড়া দুধের ক্ষেত্রেও আমরা গত ২০ বছরের পরিসংখ্যান নিলে দেখব, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। কিন্তু অপরদিকে গুঁড়া দুধে আমদানি প্রতিবছর ৩০-৪০ পার্সেন্ট করে বেড়ে যাচ্ছে। ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভালো জেনেটিক্সের অভাব, ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া ভারত এর খামারিরা প্রুভেন বুলে বীজ পেয়ে থাকে। প্রুভেন বুল অর্থাৎ একটি বুলের বীজ দেয়ার সময় খামারি জানবে যে ভবিষ্যতে উক্ত বুলের বাচ্চা মায়ের চেয়ে কতটুকু বেশি দুধ দিবে বা এক ল্যাকটেশনে কত লিটার দুধ দেবে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ব্রিডিং স্টেশনেই প্রুভেন বুল নেই। ফলে খামারিরা সিমেন কিনে প্রতারিত হচ্ছে। কারণ বুলের মেরিট না জানার ফলে খামারে বাচ্চা হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ বুলের বাচ্চাই ৫-৭ লিটার দুধ দিচ্ছে। সামান্য কিছু বুলের বাচ্চা ১৫-২০ লিটার দুধ দিচ্ছে। যেখানে ইউরোপ আমেরিকা ব্রাজিল বা ভারতের খামারিরা প্রুভেন বুল পেয়ে থাকে ফলে ওনারা জানেন যে কোনো বুলের বাচ্চা ভবিষ্যতে কতটুকু দুধ দেবে। খারাপ বুলের সিমেন ওই সব দেশের কোনো বাণিজ্যিক খামারি ব্যবহার করেন না। অতএব অতিদ্রুত খামারিদের জন্য উন্নত জাতের প্রুভেন, ক্রস ব্রিড ও ভালো মানের আমদানিকৃত দুধ, মাংস বা ডুয়েল পারপাস জাতের বুলের সিমেন সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়।