ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

মিশ্র গাছের বাগানে হলুদ চাষে অধিক লাভ

মিশ্র গাছের বাগানে হলুদ চাষে অধিক লাভ

পতিত জমিতে চাষ করা মিশ্র গাছের বাগানে গাছের ফাঁকে হলুদ চাষ করে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন কৃষকরা। চাষিরা অধিক লাভের আশায় ফল ও কাঠ বাগানে হলুদ চাষ করে বাড়তি আয় করে কৃষি জগতে সাড়া ফেলেছেন। এমন কয়েকজন কৃষক শেরপুরের নকলা উপজেলার বাশ্বেরদী ইউনিয়নের মোজার বাজার এলাকার ছইন উদ্দীনের ছেলে দুলাল মিয়া, আনসার আলীর ছেলে লিখন মিয়া ও বানেশ্বরদী এলাকার আশরাফ আলী। কৃষকরা জানান, গাছের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে হলুদের আবাদ বেশি হয়। আর তাই তো বোনাস ফসল হিসেবে কৃষকরা সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করেন। কয়েক বছর ধরে উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নসহ বেশ কিছু এলাকায় মিশ্র গাছের বাগানে হলুদ চাষ করা হয়ে আসছে। তবে এবার কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় হলুদের আবাদ বেড়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়েছে। কৃষক লিখন মিয়া জানান, নতুন করে ফল বা কাঠের কোনো বাগান করলে, গাছ বড় হতে কয়েক বছর সময় লাগে। এতে গাছের ফাঁকে বেশ জায়গা পতিত থাকে। ওইসব পতিত জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি, আদা, হলুদ, মরিচসহ স্বল্পকালীন বিভিন্ন ফসল আবাদ করা যায়। এতে গাছের বাগানের কোন ক্ষতি হয়না, বরং গাছের ফাঁকে শাক-সবজিসহ স্বল্পকালীন বিভিন্ন ফসল আবাদ করলে বাড়তি আয় পাওয়া যায়। এছাড়া গাছের ফাঁকের পতিত জমিতে স্বল্পকালীন আবাদ করায় গাছের জন্য বাড়তি কোনো সেবাযত্ন করতে হয় না। কৃষক দুলাল মিয়া জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে আম, পেয়ারা, মালটা, লেবুসহ কাঠ জাতীয় বিভিন্ন গাছের রোপণ করেছেন। এ বাগানে গাছের ফাঁকের পতিত জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। এছাড়া বাগানের চারপাশে সীমসহ বিভিন্ন সবজির গাছ রোপণ করেছেন। তিনি জানান, ২০ শতাংশ জমির গাছের বাগানে হলুদ রোপণ করা, ভেড়া দেয়া ও শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য সব মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের মোকাবিলায় না পড়লে তার ২০ শতাংশ গাছের বাগানে চাষ করা হলুদ হতে ৮০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় পেতে পারেন বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন।

ভুরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছায়েদুল হক বলেন, আমাদের কৃষক সংগঠনের প্রায় প্রতিটি কৃষক নিজ নিজ পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্য হলেও হলুদ চাষ করেন। তিনি জানান, প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) জমিতে ২০ কেজি থেকে ২২ কেজি বীজ হলুদ লাগে; এবং এতে উৎপাদন হয় ৮ মণ থেকে ১২ মণ। মাটির ধরন, উৎপাদন ও দামের বিবেচনায় হলুদ চাষে লাভ বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেন। বর্তমান বাজার দাম অনুযায়ী প্রতি কাঠাতে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা লাভ থাকে; যা অন্য কোনো কৃষিপণ্যে সম্ভব নয়। হলুদ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা বা প্রদর্শনী বরাদ্দ দিলে এ উপজেলাসহ দেশব্যাপি হলুদের উৎপাদন বাড়বে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। কৃষি বিভাগ জানায়, এবছর হলুদ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৩০ হেক্টর। কিন্তু কৃষকের অধিক আগ্রহের কারনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে ১৫০ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদ হয়েছে। স্বল্প খরচে ও নামমাত্র শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় নকলা উপজেলায় হলুদের আবাদ দিন দিন বাড়ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী। তিনি আরো জানান, নকলায় স্থানীয় জাত সুন্দরী বেশি আবাদ হয়েছে। মাটির ধরন ও সেবার ওপর ভিত্তি করে হেক্টর প্রতি ১৭ টন থেকে ১৯ টন হলুদ উৎপাদন হয়। কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী আরো জানান, নকলা উপজেলার মাটি হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও হলুদের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা বা প্রদর্শনী বরাদ্দ দেয়া হলেও উন্নত জাতের হলুদ চাষের মাধ্যমে আগামীদিনে চাষিরা অধিক লাভবান হতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত