ঢাকা ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে জরিপ

কে এগিয়ে হ্যারিস নাকি ট্রাম্প?

কে এগিয়ে হ্যারিস নাকি ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জাতীয় জরিপগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে উভয়ের জরিপের ফল খুব কাছাকাছি। এবারের নির্বাচন প্রার্থিতার দিক থেকে প্রথমে ২০২০ সালের পুনরাবৃত্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবারের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থন জানান। এখন জনমনে বড় প্রশ্ন- যুক্তরাষ্ট্র কি তার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে নাকি দ্বিতীয়বারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাবে?

জাতীয় নির্বাচনের জরিপে কে এগিয়ে? : বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের শেষের দিকে নির্বাচনি দৌড়ে নামার পর থেকে হ্যারিস জাতীয় জরিপের গড় অনুযায়ী ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। কমলা হ্যারিসের প্রচারণার প্রথম কয়েক সপ্তাহে হুট করেই তার জনসর্থন বেড়ে যায়। আগস্টের শেষের দিকে প্রায় চার শতাংশ বেশি জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি। ১০ সেপ্টেম্বর দুই প্রার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্কের পরেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপের ব্যবধান তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। তবে গত কয়েক দিনের জরিপ বিবেচনা করলে দেখা যায় তাদের মধ্যে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। এই জাতীয় জরিপগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যায় সামগ্রিকভাবে সারা দেশে একজন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কতটা, কিন্তু জরিপগুলো জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হলেও এটা নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দেয়ার সঠিক উপায় নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেম ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে একদল কর্মকর্তাকে নির্বাচিত করে থাকেন, তাদের বলা হয় ইলেকটর। এই ইলেকটররাই নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেন। একটি রাজ্যের ইলেকটরদের একসঙ্গে ইলেকটোরাল কলেজ বলা হয়। ৫০টি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ (ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া) দেশটিতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ৫১টি। এই ইলেকটোরাল কলেজই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনের দিন ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীর কথা মাথায় রেখে ভোট দিলেও আসলে তারা ৫১টি ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত করে তাদের হাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে এই ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি নিশ্চিত করতে হয়। অর্ধশত রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেলেই হাতে আসে হোয়াইট হাউজের চাবি। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য রয়েছে তবে তাদের বেশিরভাগই প্রায় সব সময় একই দলকে ভোট দেয়। বাস্তবে কেবল কয়েকটি মুষ্টিমেয় রাজ্য রয়েছে যেখানে উভয় প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই রাজ্যগুলো ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসাবে পরিচিত।

দোদুল্যমান রাজ্যে কে জিতছে? : এই মুহূর্তে এই নির্বাচনে ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসাবে বিবেচিত সাতটি রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জরিপের গড় অনুসারে এখনও পর্যন্ত কোন প্রার্থী এগিয়ে সেটা নির্ধারিত নয়। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যে আগস্টের শুরু থেকে বেশ কয়েকবার উভয় প্রার্থীর মধ্যে কে শীর্ষে এই ক্ষেত্রে রদবদল হলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। নেভাদায়ও একই গল্প হলেও প্রার্থী হ্যারিস এই রাজ্যে কিছুটা এগিয়ে আছেন। অন্য তিনটি রাজ্যে- মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন- হ্যারিস আগস্টের শুরু থেকেই দুই বা তিন পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। তবে গত কয়েকদিনে দুজনের মধ্যে ব্যবধান কমেছে। বাইডেন প্রার্থী থাকা পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক দলের জনপ্রিয়তা খুব বেশি চোখে পড়ার মতো ছিল না, তবে হ্যারিস দলটির প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনি জরিপের ফলাফলে বেশ পরিবর্তন এসেছে। কিছু রাজ্যে ট্রাম্প এক চাটিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রেখে ছিলেন, তবে হ্যারিস যোগ দেয়ার পর সেসব জায়গায় জনপ্রিয়তা ভাগাভাগি হয়েছে। যেমন যেদিন বাইডেন দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান, সেদিন তিনি সাতটি সুইং রাজ্যে গড়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন দোদুল্যমান রাজ্যের গড় জরিপ অনুযায়ী হ্যারিস এবং ট্রাম্পের মাঝে ব্যবধান খুবই সামান্য। পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন বাদ পড়ার সময় প্রায় সাড়ে চার শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন। এ অঙ্গরাজ্যটি উভয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। কারণ সাতটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ইলেকটর রয়েছে এখানে। তাই এই অঙ্গরাজ্যে জিতলে প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটে অর্জন সহজ হয়।

আমরা কি জনমত জরিপের ওপর আস্থা রাখতে পারি? : এই মুহূর্তে, জরিপগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যে একে অপরের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যখন জরিপের ব্যবধান অনেক কম হয়, তখন বিজয়ী কে হবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত