শেখ হাসিনার দোসর আরো অনেকেই আছে, শুধু রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে কেন কেউ কেউ বেশি ব্যস্ত সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক শূন্যতা যেন সৃষ্টি না হয়, সে দিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর আজিমপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসাবিষয়ক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান সম্পাদকের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। যদিও এর আগে তিনি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নিজেই জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা তার কাছে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে অপসারণের দাবি ওঠে। তবে বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পক্ষে নয়। দলটি মনে করে, এর দ্বারা সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে এবং এতে কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গেও আলোচনা করেছে। তবে দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানায়নি। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী শুধু জটিলতার পর জটিলতা তৈরি কেন করা হচ্ছে- এ ব্যাপারে প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনার দোসর তো আরো অনেকেই আছে আপনাদের মধ্যে, কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না। শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছেন, সেখানে অনেকের বিচার হবে। কিন্তু আমরা যদি কাজের বদলে অকাজে বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ি; রাজনৈতিক শূন্যতা, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করি- তাহলে তো জনগণ কথা বলা শুরু করবে। রিজভী বলেন, আজ রাষ্ট্রপতি থাকল কি থাকল না, এটা নিয়ে আমরা দেশে কেন জটিলতা তৈরি করছি? কেন আমরা দেশে সংকট ডেকে নিয়ে আসব। এটা মুখ্যবিষয় নয়। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি, তার দোসরদেরও আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা আমাদের দায়িত্ব। গণমাধ্যমের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, যেসব গণমাধ্যম নির্লজ্জের মতো শেখ হাসিনার চামচামি করেছে, শেখ হাসিনার সব অপকর্মকে যারা বৈধতা দিয়েছে- কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলে না! বিভিন্ন টেলিভিশনে আমরা যেভাবে শেখ হাসিনার সুনাম করতে দেখেছি, সেখানে বড় বড় সাংবাদিকরা ছিলেন, মিডিয়ার অনেক নামকরা লোক ছিলেন, কই তাদের বিষয়ে তো কিছু বলছেন না?
শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রের যাত্রাপথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবদান এ দেশের মানুষ ইতিহাসে লিখবে। একটা সোনালি অধ্যায় রচিত হবে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাদের এমন কিছু করা যাবে না যাতে সংবিধানবহির্ভূত কোনো কিছু হওয়ার শঙ্কা থাকে। শেখ হাসিনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার বিষয়ে আমি বলি, জন্মের পরে তার মুখে করলার রস চিপে দেয়া হয়েছিল। আমাদের দেশে সাধারণত জন্মের পর বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো হয়। গতকালও তার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে তিনি যুবলীগ-ছাত্রলীগকে বলছেন, সর্বোচ্চ প্রতিরোধ করো। অর্থাৎ রক্তপাতের হুমকির কথা তিনি বলেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উসকানি দিচ্ছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-যুব সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ।