কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সমেষপুর গ্রাম। এ গ্রামে অন্তত চার কোটি টাকার আগাম শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদিত হয়। দীর্ঘ বছর ধরে সবজির চারা উৎপাদনের জন্য এই গ্রামের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবে এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে চারা উৎপাদনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলের মাঠজুড়ে সারি সারি বীজতলায় শুধুই ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ নানা জাতের সবজির চারা। যেন সবজির চারার সবুজ চাদরে ঢেকে আছে জমি। এখানকার চাষিরা প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষ সময় থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চারা উৎপাদন করেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা এসে চারা কিনেন। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমেষপুর গ্রামে ১৯৮০ সালের দিকে স্বল্প পরিসরে ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদন শুরু হয়। এখন গ্রামের প্রায় সব পরিবারই চারা উৎপাদন করে থাকে। এখানকার উৎপাদিত ফুলকপির চারার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ফ্রেশ মাস্টার, ৭৭৭, সিরাজি, মিল্কো এবং বাঁধাকপির মধ্যে কে কে, কে কে ক্রস, অটাম, ৭০, সিলভার কাপ ৬৫, মাউন্টেন ও টেসার। ভোরের আলো ফুটতেই চাষিরা জমিতে ছুটে যান, সন্ধ্যা নাগাদ চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। চারা পরিচর্যা, নিড়ানি, কখনও বৃষ্টির পানি কিংবা রোদের তাপ থেকে চারা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া- এসবেই ভোর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ জমিতেই তাদের দিন কেটে যায়। সমেষপুর গ্রামের কপিচারা উৎপাদনকারী কৃষক জালাল উদ্দিন, ফারুক মিয়া, আবুল কাসেমসহ কয়েকজন চাষি জানান, উঁচু জমিতে কপি চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে জমি তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিটি ১২ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থের ছোট ছোট জমিতে টুকরা (স্থানীয় ভাষায় বীট) তৈরি করে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৩-৪ দিনের মধ্যেই চারা গজাতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। সবজি চাষি জামাল মিয়া জানান, আগস্টের শুরুতে প্রতি হাজার কপি চারা গড়ে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করি। এরপর আস্তে আস্তে চারার মূল্য কিছুটা কমে আসে। তবে এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে, এখন আবহাওয়া ভাল থাকায় পুরোদমে চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন জানান, গুণগত মান ভালো হওয়ায় সারা দেশে এই গ্রামের চারার চাহিদা রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এখানে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের চারা ক্রয়-বিক্রয় হয়। বুড়িচং উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. মজিবুর রহমান জানান, এখন শীতকালীন সবজি আবাদে আবহাওয়া অনুকূলে আছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদনের জন্য কুমিল্লা অঞ্চলে সমেষপুর গ্রাম ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। চারা উৎপাদনের জন্য এখানকার মাটি উর্বর। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের নিয়মিত কারিগরি পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আইউব মাহমুদ জানান, কুমিল্লায় দেশের সবজির চাহিদার বড় একটা অংশের উৎপাদন হয়। জেলার প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা শীতকালীন নানা সবজির চারা উৎপাদন করে থাকেন। পুরো জেলায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সবজির চারা উৎপাদিত হয়। আমরা এই চারা উৎপাদনে কৃষকদের যেসমস্ত উপকরণ লাগে তার সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করে থাকি।