২৪ দিন বন্ধ থাকার পর আজ শুক্রবার থেকে রাঙামাটিতে তুলে নেয়া হচ্ছে পর্যটক ভ্রমণের সব ধরনের বিধি-নিষেধ। এতে বিনোদনকেন্দ্র, হোটেলসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। পর্যটকদের বরণে এরইমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ায় অতীতের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। জেলা প্রশাসন থেকে রাঙামাটি ভ্রমণে সব ধরনের বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের পর রাঙামাটির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রাঙামাটির পর্যটনের আইকন ঝুলন্ত সেতুতে চলছে সংস্কার কার্যক্রম। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে বরণে যাতে কোনো বেগ পেতে না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষ সেতু সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, টানা বন্ধের কারণে আমরা আর্থিকভাবে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ফলে এবং শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় আশা করছি রাঙামাটি আবারও পর্যটকমুখর হয়ে উঠবে। আমরা পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
এদিকে বসে নেই হোটেল-মোটেলগুলোও। পর্যটকদের বরণ করতে শেষ মুহূর্তের ধোয়ামোছার কাজসহ চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। পর্যটকদের থাকা কিংবা খাওয়ায় যাতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে নতুনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরও আশা, পর্যটকরা আসলে অতীতের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, রূপের রানি রাঙামাটি এমনিতেই পর্যটকবান্ধব একটি শহর। সাম্প্রতিকালের বেশকিছু ঘটনায় রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে আমরা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি শহরে বর্তমানে প্রায় ৫৫টির মতো হোটেল-মোটেল রয়েছে। আমরা আবারও নতুনভাবে পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিয়েছি। হোটেল হিল পার্কের ব্যবস্থাপক স্বপন শীল বলেন, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে রাঙামটিতে আবারও পর্যটক আগমন ঘটতে যাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমরা পর্যটকদের বরণ করে নিতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। রাঙামাটি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি পর্যটন ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে না। আমি সবাইকে রাঙামাটি ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
রাঙামাটি হাউজ বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পী তঞ্জঙ্গ্যা বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা যতটা না আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ইমেজ সংকটে পড়েছেন। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। তারপরও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমরা খুশি। রাঙামাটি এখন পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমি সবাইকে রাঙামাটি ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানি কিংবা নিরাপত্তা সঙ্কটে না পড়ে সেই বিষয়ে সতর্ক ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি রিজিয়নের পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, রাঙামাটিকেন্দ্রিক যতজন স্টেকহোল্ডার রয়েছেন তাদের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যেই কথা বলেছি। পর্যটকরা ভ্রমণ করলে সেটা দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয় এবং তারা যাতে সর্বোচ্চ সেবাটুকু পায়, আমরা সেই ব্যাপারে সচেষ্ট আছি।
পর্যটক ভ্রমণে আর কোনো বিধি-নিষেধ নেই জানিয়ে ব্যবসায়ীরা পূর্বের মতো স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। তিনি বলেন, পর্যটকদের রাঙামাটি ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি আগামী ১লা নভেম্বর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা আবারও আগের মতো রাঙামাটি ভ্রমণে আসতে পারবেন।
গত ২৪ দিন পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণের ফলে পর্যটন খাতে রাঙামাটিতে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।