পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, এখনকার প্রজন্ম পরিষ্কার নদী দেখে নাই, পরিষ্কার খাল দেখে নাই। আমরা নদীর জন্য মন খারাপ করি, কারণ আমরা ছোটবেলায় পরিষ্কার নদী দেখেছি। আমরা আগামী প্রজন্মকে পরিষ্কার খাল, দূষণমুক্ত নদী দেখাতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আজকে আপনাদের হাত দিয়ে যে খালটা পরিষ্কার হবে, এই খালটা যেন আগামীতেও পরিষ্কার থাকে। আগামী দিনের নেতা হিসেবে এ দায়িত্বটা কিন্তু আপনাদেরকে নিতে হবে। বর্তমান প্রজন্মকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা কোনো দিন পরিষ্কার নদী দেখেননি, নদী পরিষ্কার হলে এটা কেমন হয়, মানুষের কত কাজে লাগে এটা আপনারা জানেন না। উপদেষ্টা বলেন, আজকে সারাদেশে ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ৬৪টি খাল, জলাশয় পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানের ধারণাটি এসেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এবং এটাই হচ্ছে যুবকদের শক্তি। তিনি বলেন, আজকে এই খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানে অংশ নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ অনেকেই।
উপদেষ্টা আরো বলেন, যারা বলেন সরকারের মধ্যে সমন্বয় নেই, কো-অর্ডিনেশন নেই, আমরা কিন্তু তা আস্তে আস্তে ভুল প্রমাণ করেছি। জাতীয় স্বার্থে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকের এই খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযান অত্যন্ত সুসমন্বয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এটাই তার বড় প্রমাণ।
এর আগে আজ সকালে ঢাকায় রামপুরা ত্রিমোহনী ঈদগাহ মাঠে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস- ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ৬৪টি খাল, জলাশয় পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানের অংশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানের শুভ উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে একযোগে ৬৪ জেলায় ৬৪টি চিহ্নিত খাল, জলাশয় পরিচ্ছন্নতাকরণের কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে ৬৪ জেলায় ৬৪টি খাল পরিষ্কার করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি এটা আজকে থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকবে। তিনি বলেন, এটা আমরা শেষ করে দেব না, আমরা প্রত্যেকটি খাল কেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ে একটি করে কমিটি করে দেব। কমিটিতে যারা থাকবে তারা দেখবে যে খালটা কারা আবার নোংরা করার চেষ্টা করছে এবং প্রথমেই তাদের সেখানে প্রতিহত করা হবে। রিজওয়ানা আরো বলেন, খালের আশপাশে যারা বাসাবাড়ির মালিক, দোকানপাটের মালিক, যারা মনে করেন খালটাই হচ্ছে আপনাদের সম্পত্তি এবং এটা নোংরা করার আপনাদের অধিকার আছে, আজকে যুব সম্প্রদায় আপনাদেরকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে এটা জাতীয় সম্পত্তি এবং এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার আপনাদের নাই।
সবশেষে প্রধান অতিথি রিজওয়ান হাসান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে এ কাজটি করছে। এটার পুরোটা কাজ জাতীয় দায়িত্ব মনে করে আপনারা যারা স্বেচ্ছাসেবীরা আছেন, যুব সম্প্রদায়ের যারা আছেন, কাজটি করবেন। এ কাজগুলো আগামীতেও অব্যাহত, চলমান থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা যেন আগামী প্রজন্মকে দূষণমুক্ত খাল আর দূষণমুক্ত নদী দেখাতে পারি এটাই যে আজকে যুব দিবসের অন্যতম প্রতিপাদ্য, এটা ভাবতে আমার বেশ ভালো লাগছে বলে উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান। অনুষ্ঠান শেষে স্বেচ্ছাসেবী ও যুব সংগঠনের যুবকর্মীদের খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানের বিষয়ে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
উল্লেখ্য যে, ঢাকায় আজ থেকে শুরু হওয়া হওয়া খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানে জিরানী খালের ১৪টি স্পটে বিডি ক্লিন-সি এর ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবী এবং নোঙর বাংলাদেশের ২০০ স্বেচ্ছাসেবীসহ মোট ৭০০ স্বেচ্ছাসেবী এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া রামপুরা খালের পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন যুব সংগঠনের যুবকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছে।
রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানে স্বেচ্ছাসেবী ও যুব সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বিআইডব্লিউটিএ, ডঅজচঙ, ইডউই, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, প্রশিক্ষণার্থী, আত্মকর্মী-উদ্যোক্তা ছাত্র-যুব ও জনগণের অংশগ্রহণে এ পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযান।
বিশ্ব ব্যাংকের আওতাধীন ডব্লিওআরজি- ২০৩০ প্রতিষ্ঠানটি খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন অফিস মেডিকেল টিম দিয়ে খাল পরিচ্ছন্নতাকরণ অভিযানে সহযোগিতা করে।