শেখ হাসিনার বিবৃতি
ভণ্ডামি বললেন সোহেল তাজ
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনার বিবৃতিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বললেন ‘ভণ্ডামি’। গতকাল রোববার তানজিম আহমদ সোহেল তাজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বলেন, এত বছর পর মুখ ফুটলো- আশ্চর্য হলামণ্ড ভণ্ডামি কী আর কত প্রকারের তা ওনার চেয়ে ভালো আর কেউ শিখাতে পারবে না। ৩ নভেম্বর ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এ বিবৃতিটি গত শনিবার ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে প্রকাশ করা হয়। এতে শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। শোক পালনের অধিকার নেই। পঁচাত্তরের পরও কুচক্রী মহল একই পরিবেশ তৈরি করেছিল। প্রশ্ন জাগে: মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩ নভেম্বর। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ১৯৭৫-এর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতদাতারা বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে।
আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেও রক্ষা করতে পারেনি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, হত্যাকারীদের বিচারের বদলে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বরাবরই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা করেছে। কিন্তু দিনশেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকবে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় একদিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরুক থাকবে এবং জাতীয় চার নেতার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ জাতীয় চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দিল্লিতে আছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও, সম্প্রতি দিল্লি থেকে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও গুঞ্জন ওঠে। তবে শেখ হাসিনা দিল্লিতেই অবস্থান করছেন এবং সেখানকার কোনো এলাকায় আছেন, তা সম্প্রতি জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’।