লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের অসুস্থ বৃদ্ধ অমল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী দরিদ্র রত্না রানী রায়। দরিদ্র সংসারে সচ্ছলতার জন্য অসুস্থ স্বামীর সেবাযত্ন করার পাশাপাশি বাড়ির পেছনে পরিত্যক্ত ৭ শতাংশ জায়গায় লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। লাউ চাষ করে সবমিলে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এখন বাজারে সবজির অনেক চাহিদা থাকায় তিনি কয়েক সপ্তাহে স্থানীয় বাজারের ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রয় করেছেন। খেতে আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার লাউ রয়েছে তার। এতে খরচ বাদে সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ প্রতি শতাংশে প্রায় ৫ হাজার টাকার বেশি হতে পারে, তাই তিন মাসের মধ্যে লাউ চাষে অভাবনীয় লাভ পেয়ে খুশি তিনি। রত্না রানীর কম খরচ ও অল্প সময়ে এমন লাভের হিসাব দেখে ওই গ্রামের অনেকেই লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়া লাউ চাষি হিসেবে তিনি এরইমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন এলাকায়। সরেজমিন কৃষানি রত্না রানীর লাউ খেতে দেখা যায়, বাড়ির পেছনে বাঁশের ঝাড়ের সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় লাউয়ের মাচায় ঝুলছে লম্বা ও সবুজ রঙের অসংখ্য লাউ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলোর গুণগতমান ঠিক রাখায় প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর পরিমাণে লাউ ধরেছে। এই পদ্ধতিতে লাউ চাষে রোগ-বালাই অনেক কম হওয়ায় ফলনও ভালো পাওয়া যায়। তার এ খেতে এখন ছোট-বড় কয়েকশ’ লাউ ঝুলছে। রত্মা রানী বলেন, পরিত্যক্ত জমিতে লাউয়ের চাষাবাদ করে খেত থেকে য়েমন আশানুরূপ ফলন পাচ্ছি সেই সাথে বাজারে দামও পেয়ে আসছি ভালো। ওজন ভেদে প্রতিটি লাউ খুচরায় ৪০-৬০ টাকা এবং পাইকারী ৩৫-৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। লাউয়ের খেতে জৈব সারের সাথে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি। তাছাড়া তেমন কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, বিষমুক্ত সবজি খেতে যেমন সুন্দর তেমনি বাজারেও রয়েছে তুলনামূলকভাবে চাহিদা বেশি। লাউয়ের চাষাবাদ করে এত লাভ হবে, কখনও ভাবিনি। তাই আগামীতে বাড়ির পরিত্যক্ত আরো কয়েক শতক জমিতে লাউ চাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রন্তা রানীর স্বামী অমল চন্দ্র রায় বলেন, কিছুদিন যাবত অসুস্থ আমি, যার কারণে আমার স্ত্রী, সংসার সামলানোর পাশাপাশি চাষাবাদ করছেন। এই জায়গায় লাউয়ের চাষাবাদ করে ভালোই ফলন পেয়েছে। এবার বাজারে তরিতরকারির দাম বেশি থাকায় লাউয়ের দামও ভালোই পেয়েছি। তিনি বলেন, সবজি উৎপাদনে আমাদের জন্য সরকারিভাবে যদি আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমাদের মতো গরিব কৃষকদের সবজি উৎপাদনে চাহিদা আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানান, বর্ষাকালীন শাক সবজি খরিপ-২ মৌসুমে সদর উপজেলায় মোট ১০৯০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে লাউয়ের চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে। মূলত এসিআই জাতের (ময়না) লাউ ৪৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৬০ দিন পর এ লাউ কর্তন করা যায়। সঠিক পরিচর্যা করলে ১২০-১৫০ দিন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমাদের কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।