৬ মাসে ১৩ হাজার হিসাবরক্ষক বিদেশে
* দক্ষ কর্মী পাঠানো বেড়েছে, শীর্ষে সৌদি আরব * বিদেশে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩ হাজার হিসাবরক্ষক বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়েছেন, যা বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে শীর্ষ ১০ কাজের তালিকায় এই পেশাটিকে স্থান দিয়েছে। ‘আমি প্রবাসী’, একটি বাংলাদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, অভিবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস এবং গতি আনতে কাজ করছে। সম্প্রতি এই প্ল্যাটফর্মটি অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে একটি অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এই সংখ্যার মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার কর্মী সৌদি আরবকে তাদের প্রিয় গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সৌদি আরবের সরকার স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেয়ায় সেখানে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে দেশটি একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। মালয়েশিয়া ৯৩ হাজার কর্মী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এবং কাতার তৃতীয় স্থানে, যেখানে ৩৯ হাজার ৫১৭ জন কর্মী কাজের জন্য গেছেন। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১০ দশমিক ৪ শতাংশ দক্ষ এবং এর মধ্যে ৩ দশমিক ২ শতাংশ দক্ষ পেশাজীবী, যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপার। বাকি ৭ শতাংশ অদক্ষ শ্রমিক। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মী ‘সাধারণ’ শ্রেণিতে পড়ে, যা ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো। সাধারণ শ্রেণিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত। নির্মাণকাজে ৬৩ হাজার ৪৬৯ জন অভিবাসী কর্মী নিয়োজিত হয়েছেন এবং ৩৩ হাজার ৭৪৮ জন কর্মী কারখানার কাজের জন্য গেছেন। অদক্ষ থেকে দক্ষ অভিবাসনে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের শ্রমবাজারের একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ঐতিহাসিকভাবে অদক্ষ শ্রম রপ্তানির জন্য পরিচিত বাংলাদেশ বর্তমানে বেশি দক্ষ এবং বহুমুখী শ্রমশক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এটি বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভবিষ্যতের জন্য একটি শুভ লক্ষণ। নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং শ্রমবাজারে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে এই পরিবর্তন। দক্ষ কর্মী পাঠানোর এই প্রবণতা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক হবে, কারণ দক্ষ কর্মীরা উচ্চমানের কাজের সুযোগ তৈরি করে এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিবেদনটি পরিষ্কার করে যে, বাংলাদেশে অভিবাসন প্রক্রিয়া এখন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে তাদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিদেশে বাংলাদেশিদের প্রতি বিশ্বাসের পরিমাণও বেড়েছে। বিদেশি নিয়োগদাতাদের কাছে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা, পরিশ্রমী মনোভাব এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্সের কারণে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তবে, অভিবাসনের এই সুফল অর্জন করতে কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। যেমন, বৈদেশিক চাকরির ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও নিয়মের সাথে মানিয়ে নেয়া, এবং অভিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীরা এগিয়ে যেতে পারেন। ‘আমি প্রবাসী’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দিক খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে, দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীরা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে আরো বেশি কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হবেন, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সর্বশেষে, অভিবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের এই অগ্রগতি দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। দক্ষ কর্মী পাঠানোর এই প্রবণতা এবং সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশিদের জনপ্রিয়তা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।