দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে সব সময়ে কড়া সমালোচনাকারী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারা আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল। সেজন্য দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে তার দলের প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন হাছান মাহমুদ।
গত রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে ভার্চুয়ালি এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি বিএনপির সাথে অনেক ক্ষেত্রে একমত এবং বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সাথে আমরা একমত এবং প্রয়োজনে বিএনপির সাথে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করব। ছাত্র-জনতার তুমুল গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাছান মাহমুদের দেশ ছাড়ার খবর এসেছিল। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ও দলের সংসদ সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে তিনি কীভাবে বাইরে গেলেন, সেই প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপিকে ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনে আনতে না পারাকে আওয়ামী লীগের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি অবশ্যই সবসময় নির্বাচন বর্জন করেছে, নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তবে যেহেতু আমরা দায়িত্বে ছিলাম, আমাদের এই জায়গায় ব্যর্থতা ছিল যে, আমরা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে তাদের নির্বাচনে আনতে না পারাটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।’
দলীয় ফোরামে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ফোরামে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল, দলীয় ফোরামে বিশদ আলোচনা হয়েছে তা নয়। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা, বিএনপির কেন প্রয়োজন, সেটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে।’ রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগতভাবে একমত’ পোষন করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি উচ্চ কক্ষ দরকার। যেভাবে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রীয় কাজে যুক্ত করা যাবে।
আমাদের দেশে বিরাট একটা বুদ্ধিজীবী সমাজ আছে, বিরাট একটা নাগরিক সমাজ আছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা অবদান রাখতে চায়, অবদান রাখতে পারে, কিন্তু তারা ব্যাপকভাবে মনে করে, তাদেরকে সুযোগটা দেয়া হচ্ছে না। আমাদের দেশে যে নির্বাচনি ব্যবস্থা, সেই নির্বাচনি ব্যবস্থায় একজন সাধারণ বুদ্ধিজীবীর পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসা কঠিন। কারণ, রাজনীতিতে যে পরিমাণ সময় দিতে হয় এবং রাজনীতি যে রকম খরুচে হয়ে গেছে, সেখানে তাদের পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসাটা কঠিন। ইলেকটরাল কলেজের মাধ্যমে যদি এই রকম একটা উচ্চ কক্ষ হয়, তাহলে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে, আমাদের দেশের নাগরিক সমাজকে আমরা সেখানে সম্পৃক্ত করতে পারব। সেক্ষেত্রে অনেক গুণী লোক রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখতে পারবেন। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বক্তব্য রেখেছেন। তিনিও আপার হাউজের পক্ষে কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রের অনেকগুলো সংস্কার দরকার মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের আগে যেটি বেশি দরকার, সেটি হচ্ছে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মূল দায়িত্বটা হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, আমি তার সাথে শতভাগ একমত। আমি মনে করি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া তিন মাস, ছয় মাস, তিন বছরে শেষ হয়ে যায়, তা নয়।
২০০৭ সালে সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একযোগে আন্দোলন করার উদাহরণ টানে হাছান মাহমুদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এক-এগারোর সরকারের সঙ্গে একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব কিংবা বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, সেগুলোর অনেকগুলোর সাথে আমরা একমত।’