সুসংবাদ প্রতিদিন

মাল্টা চাষে কর্মসংস্থান

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মসিউর রহমান জেহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। আবার কিছু মাল্টা হলুদ বর্ণের হয়েও দোল খাচ্ছে বাতাসে। বাগানটিতে মাল্টার বাম্পার ফলন দেখে চোখ জুড়াবে যে কারোরই। সারি সারি করে লাগানো ২০ বিঘা জমির এই মাল্টার বাগান আতিউজ্জামান আপেল নামে এক ব্যক্তির। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টার বাগান করে সফল হয়েছেন তিনি। ২০০৬ সালে পেয়ারা ও আম বাগান দিয়ে কৃষি উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখান নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের আতিউজ্জামান আপেল। রাতদিন পরিশ্রম করে বছর ছয়েক পর আমের সফলতার মুখ দেখেন তিনি। সেই আগ্রহেই আরও জমি লিজ নিয়ে ২০২০ সালে শুরু করেন মাল্টা চাষাবাদ। এখন তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা-আমসহ মাল্টা চাষ করছেন। এরমধ্যে ২০ বিঘা জমিতে লাগানো আছে দেশীয় মাল্টা। তারপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর আসছে সফলতা। শুধু মাল্টা বিক্রি করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এই সফলতা থেকেই অনেকের দৈনিক রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। মাল্টা চাষে সফল আতিউজ্জামান আপেল বলেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই ম্যাধমিক পরীক্ষার পর থেকে এই স্বপ্নের পেছনে কাজ শুরু করি। শুরুর দিনগুলোয় আম আর পেয়ারা চাষে কাটলেও এখন আমার মূল ফোকাস দেশি মাল্টায়। বাগানে এখন ৪০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে। আপাতত বাগানে যে পরিমাণে ফল আছে, সেগুলো বিক্রি করে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২২-২৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে। দেশি মাল্টার গুরত্ব তুলে ধরে আপেল বলেন, বিদেশি জাতের মাল্টার চেয়ে দেশি জাতের মাল্টা অনেক সুস্বাদু। দেশীয় মাল্টায় কখনও ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। অন্যদিকে ভিনদেশি মাল্টায় ব্যবহৃত হয় ফরমালিন। তাই বিশুদ্ধতার ঘাটতি থেকে যায়। দেশীয় মাল্টার রং সবুজ আর হলুদ হয়। বিদেশী মাল্টায় কমলা বর্ণের হওয়ায় আমাদের দেশের মানুষ ওটাতেই আগ্রহ করে খায়। তবে তিনি দাবি করেছেন, বিদেশী মাল্টার থেকে দেশী মাল্টায় অনেক স্বাদ। তাই দেশি জাতের মাল্টা খাওয়ার পরামর্শ দেন। বাগানে মাল্টা কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, আমি এই বাগান থেকে মাল্টা কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাই। দৈনিক ৪০-৫০ ক্যারেট মাল্টা এখান থেকে কিনি। এখানকার ফলগুলোর স্বাদ ও রং অতুলনীয়। স্থানীয়রা জানান- আতিউজ্জামান আপেলের মাল্টা চাষের সফলতা এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জমিতে মাল্টা চাষের জন্য অনেকে তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালেহ্ আকরাম বলেন, আপেল একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তাকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আপেলের মতো বেকার যুবকরা কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে এলে যেমন বেকারত্ব কমবে তেমনি কৃষি সেক্টর হবে আরও সমৃদ্ধ। তিনি আরও বলেন, নাচোলে একটি ফল বাজার গড়ে উঠেছে তার ফলে সারা দেশেই সহজে ফলগুলো পাঠানো সহজ হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা বাগান পরিদর্শন করে ফল কিনতেও পারছেন। এতে এই উপজেলার অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মাল্টা ফলটি আগে বিদেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণে আমদানি করতে হতো এখন এই দেশীয় মাল্টা চাষ করায় আমদানির চাহিদা পূরণ করছে।