বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদা প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট, তবে শীতকালে এই চাহিদা নেমে আসে ৯ হাজার মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, দেশে মোট ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার সমন্বিত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট- যা দেশের সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বেশি।
তবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন- গ্যাস, কয়লা ও এলএনজি সংকটের কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ফলে, বাংলাদেশকে একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারত থেকে মোট ১, ৬৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে, এর মধ্যে ৭০০ মেগাওয়াট আসে আদানি পাওয়ার থেকে।
সম্প্রতি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি পাওয়ারের কাছে বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ না করা হলে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে আদানি।
তবে, ৩ নভেম্বর আদানি পাওয়ার তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বাংলাদেশি সংবাদসংস্থা ইউএনবির কাছে। আদানি জানায়, তারা বাংলাদেশকে ৭ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের জন্য কোনো দাবি করেনি। আদানি গ্রুপের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা পিডিবিকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং ৮০০-৮৫০ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধের দাবি তাদের পক্ষ থেকে আসেনি।
আমাদের গ্যাস আছে, কিন্তু উত্তোলন করছি না। আবার কয়লাও আমাদের আছে, তাও নানা কারণে উত্তোলন করা যাচ্ছে না। আবার সরাসরি আমরা বিদ্যুৎ আমদানিও করছি। এসব কারণে বিদ্যুৎ খাত বলতে গেলে পরনির্ভর হয়ে পড়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে এই সংকট থাকবেই।
একই দিন ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক ফটো স্টোরিতে- ‘দ্রুত দিচ্ছি! আদানি গুঁতো দিতেই সুর নরম বাংলাদেশের, বকেয়া ৭,২০০ কোটি ফেরতের আশ্বাস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়, ‘দ্রুত দিচ্ছি- বিদ্যুতের ৭,২০০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় আদানি পাওয়ারের তরফে যে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে, তারপরই সুর নরম করল বাংলাদেশ। বকেয়া টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো। আদানি পাওয়ারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের থেকে সবথেকে বেশি বিদ্যুৎ পায় বাংলাদেশ।
এদিকে নতুন করে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছে সরকার। এ কমিশনের চেয়ারপারসন হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং বিকল্প চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার ‘বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন’ গঠন করেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ভাইস চেয়ারপারসন এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের এ কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিবকে সদস্য-সচিব করা হয়েছে।
কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ থেকে অনুমোদনের লক্ষ্যে উপস্থাপনের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করা, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে উপস্থাপনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও হালনাগাদকরণের নির্দেশনা দেয়া, জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি পর্যালোচনা এবং জাতীয় পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়াবলি সম্পর্কে আন্তঃমন্ত্রণালয় মতপার্থক্য দূর করা।