সুসংবাদ প্রতিদিন

আগাম শিমফুলে রঙিন মাঠ কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

শিম চাষ করে একটি অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদল করে দিতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি অঞ্চলের শিমচাষিদের। শিমের রাজধানী পাবনার ঈশ্বরদীতে আগাম জাতের অটো শিমগাছ শোভা পাচ্ছে মাঠের পর মাঠ। উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা, শেখপাড়া, মুলাডুলি মধ্যপাড়া ও গোয়ালবাথান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত হেক্টর জমিতে আগাম শিমের আবাদ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেখানেই দেখা যাচ্ছে শুধু শিমের আবাদ। চাষিরা শিম গাছ পরিচর্যা, সার-বীজ প্রয়োগ ও শিম সংগ্রহ করছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে শিমের ফুল ও ডগা পরিচর্যার কাজ করছেন। শিম চাষিরা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নে প্রায় ২০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ হয়। শিম শীতকালীন সবজি হলেও বেশি লাভের আশায় এখানকার শিম চাষিরা গত ১০ বছর ধরে আগাম জাতের রূপবান ও অটোজাতের শিম চাষ শুরু করেন। শীত মৌসুমের আগেই এই রুপবান ও অটো জাতের শিম বাজারে ওঠায় মূল্য বেশি পান তারা। ফলে আগাম শিম চাষের প্রতি সবাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে আগাম শিমের চাষ বাড়তে থাকে। এতে লাভবান হয়ে কৃষক তাদের ভাগ্য বদল করেছেন। আগাম শিম চাষে নানা প্রতিকূলতা আছে। এতে সার, কীটনাশক ও সেচের পরিমাণ বেশি লাগে। খরচও বেশি হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। তার পরও তারা লাভবান হচ্ছেন আগাম জাতের অটো ও রূপবান সিমের আবাদ করে। শিম চাষিরা আরও জানান, এ বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পরপর চারবার নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়। এতে আগাম শিমের বেশিরভাগ জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিম ক্ষেত নষ্ট হয়। তারপর অবশ্য আবহাওয়া অনুকূলে আসায় শিম চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিম চাষিরা। এরইমধ্যে আগাম জাতের শিম বাজারে উঠেছে। খরচের তুলনায় দাম বেশি পাওয়ায় চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে প্রশান্তির হাসি। কৃষকরা এখন মহাব্যস্ত অটো শিমের মরা ফুল বাছায় ও তাজাফুল রক্ষায়। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ঈশ্বরদীতে ১২৯০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে শিমের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ টন। সব মিলিয়ে ঈশ্বরদীতে এবার শিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৫০০ টন। এদিকে ক্রেতা বিক্রেতার পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছেন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান ঈশ্বরদীর মুলাডুলি সবজির আড়ত। প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচা এখানকার সবজির আড়ত গুলোতে। আড়তের পুরো জায়গায় শত শত মন শিম স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে সবজির আড়ত বসে সপ্তাহের সাত দিনই। হাটের আড়তদারসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন এই হাট থেকে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক শিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়। মুলাডুলি আড়তের আড়তদার আমিনুল ইসলাম বাবু ওরফে শিম বাবু বলেন, শিমের মৌসুমী হওযায় ঈশ্বরদীসহ আশপাশের গ্রাম এলাকা থেকে প্রতিদিন তাদের শিম বিক্রির জন্য এই আড়তে নিয়ে আসেন। এছাড়াও শিম কেনার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা শিম কিনতে আসেন এই আড়তে। এই আড়ত থেকে প্রতি ট্রাকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার শিম বিভিন্ন স্থানে বাজার রাত করা হয়। এই আড়তে প্রতি মন শিম ৩৮০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকার শিম বেচাকিনা হয় এখানকার সবজির আড়তগুলোতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকলেও বর্তমানে আবহাওয়া বেশ ভালো। এজন্য ফলনও অনেক ভালো হচ্ছে। এখানকার শিম চাষিরা দামও ভালো পাচ্ছেন। শিম আবাদ করে লাভবান হবেন তারা।