মেধাবী সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে সব ক্যাডারের উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর পূর্ত ভবন অডিটোরিয়ামে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার : প্রেক্ষিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে বক্তরা বলেন, সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অথচ সংবিধানের এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্যাডার সদস্যদের সাংবিধানিক অধিকার অনৈতিকভাবে হরণ করা হচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গড়ে ওঠার পেছনে প্রশাসন ক্যাডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর যে গুলি চালানো হয়েছিল, তার নির্দেশদাতা ছিল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। কারণ মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলির নির্দেশ দিতে পারে শুধু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাদের নির্দেশেই যে গুলি চালানো হয়েছে তা বিভিন্ন ভিডিও থেকেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এসময় বৈঠক ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ বৈষম্যহীন, জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’-এর বাস্তবায়ন, প্রশাসন ক্যাডারের ও অন্যান্য ক্যাডারের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনয়ন, পদ আপগ্রেডেশন, পদোন্নতিতে সমান সুযোগ প্রদান, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস এবং বিভিন্ন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ইত্যাদি এছাড়া দক্ষ সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষা বৃত্তির ক্ষেত্রে সমতা আনয়ন, গাড়ি ঋণ সুবিধার বৈষম্য দূরীকরণসহ অন্যান্য দাবি তুলে ধরা হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আরও আলোচনা করেন- গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রববানি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম এ আজিজ, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর মো. আব্দুস সামাদ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনন্সিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ আহমেদ ইকবাল চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সালেকুর রহমান মাসুম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান (জীবল) এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল হুদা প্রমুখ।