সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩-এর তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ জেলার ফল প্রকাশিত হয়। ৬ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে এ ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই প্রকাশিত ফলাফলকে ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক বলে দাবি করেন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী। তাদের অভিযোগ চারটি সেটের পরীক্ষা হলেও সবগুলো সেটের মূল্যায়ন করা হয়নি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো করার পরেও চূড়ান্ত ফলাফলে তাদের রোল নম্বর না আসায় তারা অভিযোগ করে আসছে। এরইমধ্যে তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও করে লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার শারমিন আক্তার, রোল-২৪১০৮২৫, সেট-পদ্মা। একই জেলার ও উপজেলার হোসনে আরা আক্তার, রোল-২৪১৬৬৭১, সেট-যমুনা। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার নাজবিন আক্তার, রোল-১৪১০৬২৫, সেট পদ্মা। টাংগাইল জেলার কালীহাতি উপজেলার মো. জুলহাস উদ্দিন, রোল- ২৩২৯৩৮৭, সেট-যমুনা। একই উপজেলার আঁখি আক্তার, রোল-২৩১৫৬০৩, সেট-যমুনা এবং মধুপুর উপজেলার মো. মিলন হোসাইন, রোল-২৩৩৬১৮১, সেট- পদ্মা। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তানজিমা আক্তার, রোল-১৩১১০৮৭, সেট-যমুনা। চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার কহিনুর আক্তার আঁখি, রোল-৫০১৫৫২৫, সেট-পদ্মা। এছাড়াও আরো শতশত অভিযোগকারী রয়েছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল সঠিকভাবে- মূল্যায়ন করা হলে তাদের রোল নম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে আসতো বলে তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। এসময় তারা পুনঃরায় সংশোধিত রেজাল্ট প্রকাশ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লক্ষ্মীপুর জেলায় মেঘনা সেটের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মেঘনা সেটের কারও চূড়ান্ত রেজাল্ট আসেনি। এর আগে লিখিত পরীক্ষার রেজাল্টও প্রথমে আসেনি। পরে আমরা পুনরায় মূল্যায়ন করে প্রকাশ করলে আমাদের রেজাল্ট আসে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, রেজাল্ট পুনরায় মূল্যায়ন করার জন্য।’
অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা থেকে কয়েকজন ‘মেঘনা সেট’ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, তাদের কারও ফল আসেনি। তবে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস চাঁদপুর জেলায় মেঘনা সেটে উত্তীর্ণ হয়েছে এমন কয়েকটি ফল নিশ্চিত হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা বিভাগের, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলার একাধিক প্রার্থীও তাদের মেঘনা, সুরমা, যমুনা, পদ্মা সেট নিয়েও অভিযোগ করেছেন।
এক নারী প্রার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষাসহ মৌখিক পরীক্ষা অনেক ভালো দিয়েছিলাম। ভাইভার স্যারেরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন আমার ওপর, কারণ তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আমি সঠিক এবং সাবলীলভাবে দিয়েছিলাম। এছাড়া আমার সার্টিফিকেটেও ফুল মার্কস থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটি সনামধন্য কলেজ থেকে আমার গ্র্যাজুয়েশন এবং পোস্ট-গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি। আসলে এত ব্যাখ্যা দেয়ার একটাই কারণ, আমি সব ভালো দেয়ার পরও রেজাল্ট আসলো না, আমার সেট ছিল মেঘনা এবং আমার জানা মতে মেঘনা সেটের কারোরই রেজাল্ট আসেনি। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার।
এছাড়া এর আগে লিখিত পরীক্ষায় যাদের ফল পুনর্মূল্যায়নের পরে এসেছে, তাদের একটি অংশ অভিযোগ করে বলেন, আগের পরীক্ষার মতো এবারও তাদের ফলাফলে সমস্যা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার তিন ধাপে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা হলেও দীর্ঘদিনে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। চার মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করছেন তৃতীয় ধাপের ফল প্রত্যাশীরা।
এর আগে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো দ্রুত সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ এর তৃতীয় ধাপের (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের জন্য তারা তিন মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন।