কয়েক দফা স্বল্পমেয়াদি বন্যার ধকল কাটিয়ে আগাম ফুলকপি চাষ করে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। সেই হাসি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বাজারের ভালো দাম। জেলার সবজির চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এসব ফুলকপি। লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী ৫ উপজেলার তিস্তা-ধরলা তীরবর্তী সবজি চাষের উপযোগী বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। বিশেষ করে পাটগ্রামের বাউরা, হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া, ভেলাগুড়ি, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জের ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি, সাপ্টিবাড়ি, ভেলাবাড়ি, সদর উপজেলার ফুলগাছ, বড়বাড়ি, মোগলহাট এলাকাগুলোয় ফুলকপি চাষে হয়েছ।
খরচের চেয়ে তিনগুণ লাভ পেয়ে খুশি ফুলকপি চাষিরা। ভোর থেকে ফুলকপির বিক্রির ধুম পড়ে যায় গ্রামগুলোতে। পাইকাররা আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে। কৃষানকৃষানি দলবেঁধে জমি থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করে তা ওজনের পর বিক্রি হয়। ফুলকপি বহন করতে আসে অটোরিকশা, পিকাপ ভ্যান ও ট্রাক। কৃষকরা জানান, রোগবালাই কম থাকায় আগাম জাতের ফুলকপির আবাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফুলকপি অধিক মুনাফাচাষিরা। আগাম ফুলকপি পাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারমূল্য বেশি পাওয়ায় চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। প্রতি কেজি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা ও প্রতি পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করছেন তারা। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষার পরপরই শীতের আগে আগস্ট মাসে ফুলকপির চারা রোপণ করা হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। এবার জেলায় আগাম ২২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ হয়েছে। স্বল্পসময়ে ভালো ফলন হওয়ার পাশাপাশি অধিক মুনাফা পাওয়ায় অনেক চাষিই এখন ফুলকপি চাষে ঝুঁকছেন।
ফুলকপি চাষি মহির উদ্দিন বলেন, সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দেড় লাখ, আশা করি, ৪ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করব। সবজি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, আমরা প্রতিদিনই ট্রাকভর্তি করে কৃষকদের ফুলকপি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকি। বর্তমানে ফুলকপির চাহিদা ব্যাপক। দামও ভালো। চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, লালমনিরহাট জেলা তিস্তা-ধরলা নদী বিধৌত জেলা হলেও এর অধিকাংশ জমি উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে শাকসবজি আবাদের উপযোগী। মোটামুটি আগাম শাকসবজি আবাদ হয়েছে। বর্ষার পরপরই শীতের আগ মুহূর্তেই শাকসবজি তুলনামূলক কম থাকে। এই মুহূর্তে যারা আগাম সাবজি আবাদ করবে তারা নিঃসন্দেহে বাজারে ভালো দাম পাবে। সেইসঙ্গে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করতে এবং তা বাণিজ্যিকীকরণ করতে কৃষি বিভাগ সারা বছর সবজি চাষে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা করে আসছে। আগামী বছরে আবহাওয়া অনুকূল ও সার কীটনাশকের দাম কম এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে কৃষকরা আরো দ্বিগুণ আগাম জাতের সবজি ফলার আশা ব্যক্ত করেন।