সুসংবাদ প্রতিদিন
কলমিশাক চাষে ফিরছে আর্থিক সচ্ছলতা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুর রশীদ, লালমনিরহাট
লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ের পাশে একটি ডোবায় দেখা যাচ্ছে সবুজ কলমিশাক। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে পানির উপর যেন ঘাস জন্মে ভেসে আছে। সঙ্গে রয়েছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। আর সেই ডোবার পানিতে কলমিশাক চাষ করেছেন শরিফুল ইসলাম নামে এক কৃষক। গত কয়েক বছর এই নিচু ডোবা জমিতে ধান চাষ করতেন তিনি। জমি নিচুর কারণে পানি প্রায় সারাবছর থাকে। এতে ধানের ক্ষতি হত। আবার অনেক সময় ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় একদম কাটতেই পারতেন না। এভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পানিতে কলমিশাক চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। কলমিশাক চাষি শরিফুল ইসলাম কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে।
সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার কাকিনা চাপারতল এলাকার শাহিন মিয়ার কাছ থেকে ২৪ শতাংশ ডোবা জমি লিজ নিয়ে কয়েক বছর ধান চাষ করতেন শরিফুল। জমি নিচু হওয়ার কারণে পানি জমে থাকায় কয়েকবার ধানের ক্ষতি হয়েছে। ধানচাষে লোকসান দেখে পানিতে কলমিশাক চাষ করেন শরিফুল। তাই দুই বছর ধরে ধানের পরিবর্তে নিচু জমিতে নিজেই কলমিশাক চাষের উদ্যোগ নেয়। এখন কলমিশাক চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তিনি। তার এমন পানিতে ভাসমান কলমিশাক চাষ দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। শরিফুল ইসলাম বলেন, এই ডোবায় প্রায় সব সময় পানি থাকে। গত দুই বছর আগে এখানে ধানচাষ করে পানির জন্য কাটতেই পারিনাই। তাই ধানচাষ বাদ দিয়ে কলমি শাক চাষ করেছি। ধান চাষ করে কয়েকবার আমার লোকসান হয়েছে। এরপর কলমি শাক উচু জমিতে আবাদ করে কেটে বিক্রি করি। পরে বাকি অংশের ডাটা গুলো ডোবা জমির পাঁনা পরিষ্কারের পর ফেলে দেই। সেই থেকে ডাটাগুলো থেকে কলমি শাকের কুশি গঁজায়। এভাবে বিস্তৃতি লাভ করে পুরো পানিতে শাক জন্মেছে। পানিতে এভাবে কলমিশাক চাষ করা দেখে এলাকার অনেক কৃষক আমার কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন সকালে পাইকাররা শাক নিতে আসে। পানিতে নেমে শাক কেটে দেই। আবার নিজেও বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। মহাসড়কের পাশে কলমিশাক আবাদ দেখে অনেকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে শাক কিনে নিয়ে যায়। শাক বিক্রির পর বাকি অংশের ডাটাগুলো থেকে আবার কুশি গজায় ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে। ৫টি করে ছোট আঁটি বেঁধে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি প্রতিদিন। এভাবে সকাল-বিকেলে মিলে প্রতিদিন কলমিশাক বিক্রি করে আয় হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আমার শাকের চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। এই জমিতে ধান চাষ করলে এত আয় হত না। আগের ধান চাষের চেয়ে এখন এই কলমিশাক চাষ করে অনেক ভালো আছি। কাকিনা চাপারতল এলাকার কৃষক আহেদুল জানায়, এই জমিতে সারা বছর প্রায় পানি থাকে। এখানে কয়েক বছর ধান চাষ করে শরিফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন দেখছি পানিতে ভাসমান কলমিশাক চাষ করেছে। প্রতিদিন ভালো দামেও শাক বিক্রি করছে। যা তার ধান চাষের চেয়ে লাভজনক। এটা মাছ চাষের জমি,ধান চাষের জন্য উপযোগী জমি নয়।
কালীগঞ্জ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কলমিশাক খুব কম সময়ের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী হয়। একপাশ থেকে শাককাটা শুরু করে সম্পূর্ণ শাক কাটতে কাটতে পুনরায় শাক কাটার উপযোগী হয়ে যায়। আমার ব্লকের কৃষক শরিফুল ইসলাম প্রতিদিন পানি থেকে শাক কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে নিয়ে পাইকারি অথবা খুচরা বিক্রি করেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, শরিফুল ইসলাম একজন সফল চাষি। কলমিশাক নিচু জমির পাশাপাশি পানিতেও চাষ করা যায়। সরজমিনে গিয়ে দেখেছি সে ডোবা জমিতে ধানের পরিবর্তে ভাসমান কলমিশাক চাষ করেছে। এই জমিতে পানি থাকে তাই ধান চাষের জন্য উপযুক্ত জমি নয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।