Achieving Just Societies: Inclusive Justice Pathways for People and Planet in Asia and the Pacific- শীর্ষক একটি রিজিওনাল কনফারেন্সে (Regional Conference) কি-নোট স্পিকার (Keynote speaker) হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। UNDP, Thailand Institute of Justice [TIJ], UNEP, IDLO, UNESCO, UNICEF, UN Women Asia and the Pacific, Pathfinders, & World Justice Project এর যৌথ উদোগে আয়োজিত উক্ত রিজিওনাল কনফারেন্সে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় (Keynote address) উল্লেখ করেন যে একটি গণমুখী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে বাংলাদেশের জনগণের পরম অভিপ্রায় জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত গণবিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি দেশের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকা কতটা জরুরি তা পুনরায় উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাসের আলোকে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কলোনিয়াল লিগ্যাসি (colonial legacy) হিসেবে যে আনুষ্ঠানিক (formal) বিচারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে অনেক সময়ই তা গণপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। তারই সূত্র ধরে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শত বছরের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (customary dispute resolution mechanism) বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আধুনিক যুগে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে মর্মে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচারব্যবস্থা (inclusive justice) নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধান বিচারপতি তৃণমূল পর্যায়ে আইনি প্রতিকার তথা Community Justice নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশের গ্রাম আদালতসমূহের সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া, প্রচলিত বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি লিগ্যাল এইড (Legal Aid) কার্যক্রমের মাধ্যমে নাগরিকগণের আইনি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সদস্যগণ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে মর্মে মাননীয় প্রধান বিচারপতি কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অবহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট capability approach প্রয়োগ করে কেবলমাত্র অসচ্ছল ব্যক্তি লিগ্যাল এইডের সহায়তা পাবেন এই সংকীর্ণ ধারণাকে আরও বিস্তৃত করেছে। ফলে বর্তমানে অর্থিক অসঙ্গতি ছাড়াও অন্য যে কোনো প্রতিকূলতার কারণে কোনো ব্যক্তি আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হলে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া, তিনি কনফারেন্সে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলায় (Public Interest Litigation) জুডিশিয়াল রিভিউ (Judicial Review) এর সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনের উদারনৈতিক ব্যাখা প্রদান করে সমাজের টেকশই উন্নয়নে (sustainable development) গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে এবং এভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি তার প্রদত্ত বক্তব্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচার বিভাগ সংস্কারে তার ঘোষিত রোডম্যাপ (Road map)-এর রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে সরকারের নিকট বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ (Supreme Judicial Council)কে পুনরুজ্জীবিত করেছে মর্মে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে মর্মে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বিচার বিভাগের আধুনিকীকরণ তথা বিচারব্যবস্থায় বিচারপ্রার্থীর অভিগম্যতা বৃদ্ধিসহ বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে শিগগিরই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরিশেষে, তিনি জনবান্ধব বিচারব্যবস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে inclusive justice নিশ্চিতকরণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক কৌশলপত্র প্রণয়নে আন্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।