যুগে যুগে বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বিস্তার লাভ করেছে বিজ্ঞান, যার ধারাবাহিকতায় সভ্যতার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থেকেছে সবসময়। বিজ্ঞান কখনোই থেমে থাকেনি, বরং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মাধ্যমেই এগিয়েছে গোটা বিশ্ব। বিজ্ঞানের কারণেই বিভিন্ন যুগ পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে আমাদের পৃথিবী। বিজ্ঞানের এমন বিস্ময়কর পাঁচটি উপায় নিয়ে আলোচনা রয়েছে এই প্রতিবেদনে। বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটির মতো মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। নানা কারণে মানুষের দেহে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ও তা বাড়িয়ে দেয় রক্তের শর্করার পরিমাণকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রক্তের এই অতিরিক্ত শর্করা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি ডায়াবেটিসের কারণে মাড়ির রোগ, স্নায়ুর ক্ষতি, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব, অঙ্গ কেটে ফেলা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে মানুষ। সাধারণত ওষুধ, ইনসুলিন ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন অনেকেই। তবে নতুন প্রজন্মের এক চিকিসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই রোগটিকে ফেরানো যেতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের জন্য প্রথম নারী হিসেবে গত মাসে নিজের দেহে স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন এক নারী। এর আগে, ২৫ বছর বয়সি ওই নারীকে ডায়াবেটিসের কারণে অনেক পরিমাণে ইনসুলিন নিতে হতো। এখন তিনি স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে নিজের দেহই ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করছে। স্টেম সেল হচ্ছে শরীরের আদি কোষ, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি হয়। গত এপ্রিলে একই ধরনের স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫৯ বছর বয়সি এক ব্যক্তি নিজের দেহে আবার ইনসুলিন তৈরি করতে পেরেছেন। স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকলেও এর ফলাফল এখন পর্যন্ত রোমাঞ্চকর বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
ক্যান্সারের টিকা : কোভিড মহামারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ভ্যাকসিন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিতে মডার্না ও ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন যে এমআরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে তা ক্যান্সার শনাক্ত ও এর আক্রমণ ঠেকাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে দেহের ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে। এক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সার কোষের উপরিভাগের প্রোটিনের সঙ্গে মিল রেখে ক্যান্সারের ভ্যাকসিনের নকশা তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। আগস্টে মেলানোমা ক্যান্সারে আক্রান্ত শত শত রোগী বিশ্বের প্রথম এমআরএনএ ক্যান্সার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এরইমধ্যে অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র ও অন্যান্য ক্যান্সারের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে রোগের সুরক্ষা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে তাই স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের উচ্চ জেনেটিক ঝুঁকি রয়েছেন এমন নারীদের ক্যান্সার ফিরে আসা ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা সম্ভব হতে পারে।
আরও দ্রুত ক্যান্সার শনাক্তে সহায়তা করবে এআই : আগামী চার বছরে ফুসফুসের ক্যান্সার ও মস্তিষ্কের টিউমারের মতো গুরুতর অসুস্থতাকে আরও ভালোভাবে নির্ণয়ের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহারকে দ্রুত উন্নত করা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যেতে পারে মানুষের আয়ু। দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত ও জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এই এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ চলছে। যুক্তরাজ্যের ‘সাউথ টাইনসাইড অ্যান্ড সান্ডারল্যান্ড এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’-এর মতে, এ এআই প্রযুক্তিটি এক্স-রের মাধ্যমে স্ক্যান করে ও মানব চিকিৎসকদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে দেহের এমন কিছু স্পটকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। রোগ নির্ণয়ে নির্ভুলতায় ৪৫ শতাংশ ও ডায়াগনস্টিক দক্ষতায় ১২ শতাংশ উন্নতি দেখিয়েছে এআই প্রযুক্তিটি।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের বিস্ময়কর সব আবিষ্কার : মহাকাশে উৎক্ষেপণের দুই বছরের মধ্যে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি টেকনিকালার মাস্টারপিস হিসাবে ধারাবাহিকভাবে আকাশের বিভিন্ন ছবি উন্মোচন করেছে। তারার উৎপত্তি, কৃষ্ণগহ্বর, মহাবিশ্বের বিবর্তন ও মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কি না সে সম্পর্কে বিস্ময়কর সব আবিষ্কারকে সক্ষম করে তুলেছে এটি। টেলিস্কোপটি এতটাই শক্তিশালী যে, মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্রই ৩০ কোটি বছর, সে সময়ের ছবিও সামনে এনেছে এটি। মহাবিশ্বের নানা খবর আমাদের কাছে পৌঁছানো এ টেলিস্কোপটি এক হাজার চারশ’ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করা আলোও এটি ধারণ করেছে। প্রচলিত বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বকেও পাল্টে দিচ্ছে টেলিস্কোপটির কয়েকটি আবিষ্কার। যেমন- প্রাচীন কিছু ছায়াপথ বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি উজ্জ্বল বা আকারে বড়। অদ্ভুত ও অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ফলাফলকে বিজ্ঞানে ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয় না, কারণ পরবর্তী সময়ে কোনো আবিষ্কার বা বিপ্লবকে আরও এগিয়ে নিতে যায় এটি। মহাবিশ্বের ইতিহাস সম্পর্কে জানা ও মানুষরা একা কি না তা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছে এই টেলিস্কোপ।
গতি পাচ্ছে পরিবেশবান্ধব বা নবায়নযোগ্য শক্তি : বিশ্বের জ্বালানি পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির বা আইইএ’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগামী ছয় বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলো আগের ছয় বছরের তুলনায় তিনগুণ গতিতে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে রয়েছে। চীন ও ভারতের পরিবেশবান্ধব শক্তি কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত হবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের উত্থান, যা সহায়তা করবে বিশ্বের অন্যতম দূষণকারী দুটি দেশের জীবাশ্ম জ্বালানি খরচকে কমিয়ে আনতে। আইইএ অনুসারে, এ দশকের শেষ নাগাদ বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি নবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে চীনে। গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের মতে, চীনে কয়লা কেন্দ্রের জন্য নতুন পারমিটের সংখ্যা ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১০০ গিগাওয়াট থেকে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে কেবল ১২টি নতুন প্রকল্পে নেমে এসেছে, যেখানে মোট পারমিটের সংখ্যা হয়েছে ৯.১ গিগাওয়াট।