শরীয়তপুর জেলার কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিনা চাষে পেঁয়াজ-রসুন আবাদে। বিনা চাষে পেঁয়াজ-রসুন আবাদে যেমন খরচ কমে, তেমনি ফলনও ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষকরা এ পদ্ধতিতে আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমির উপযোগিতা অনুয়ায়ী ভেজা নরম মাটি বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদের জন্য আদর্শ। তবে শরীয়তপুরে চাষ ও বিনা চাষ দুই পদ্ধতিতেই পেঁয়াজ-রসুন আবাদ হয়। ২০০৬ সাল থেকে শরীয়তপুরে বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ শুরু হলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহায়তায় ধীরের ধীরে এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে আবাদের ফলে কৃষকের যেমন জমি চাষের খরচ ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেচ খরচ বেচে যায়, তেমনি ফলনও বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ বৃদ্ধি পায়।
মালচিং হিসেবে কচুরিপানা ও খর ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরা শক্তি বেড়ে যাওয়ায় সারও কম ব্যবহার করতে হয়। ফলে আগের প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে বিনা চাষ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ শুরু হয়ে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে রোপণের কাজ শেষ হয়। রোপণের ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কৃষক ফলন ঘরে তুলতে পারেন। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবছর শরীয়তপুরে ৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে- ৪৭ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন ও রসুনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন আরও বাড়বে বলে আশাবাদি কৃষক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ। জেলার জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণ নগর, পশ্চিম নাও ডোবা, পূর্ব নাওডোবা, সেনেরেচর, বড় কান্দি, বড় গোপালপুর, মূলনা, জাজিরা, জয়নগর, পালের চর, বিলাসপুর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নে, নড়িয়া উপজেলার রাজনগর, মোক্তারেরচর, নশাসন, জপসা, ভোজেশ্বর, ফতেহজঙ্গপুর ইউনিয়নে, সদর উপজেলার চন্দ্রপুর, চিকন্দী, শৌলপাড়া, ডোমসার, বিনোদপুর ইউনিয়নে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর, ইসলামপুর, ধানকাঠি, সিধলকুড়া ও পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নে, গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া, সামন্তসার, ইদিলপুর, নলমুরি, কুচাইপট্টি, গোসাইরহাট ইউনিয়নে এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও, রামভদ্রপুর, ডিএম খালি, চরভাগা, তারাবুনিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ হয়ে থাকে।
নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কৃষক টিটু মাদবর বলেন, এ বছর পেঁয়াজ-রসুন আবাদে চাষ পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তবে এবার আবাদ মৌসুমে দুই দফায় বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে পেঁয়াজ-রসুন রোপণ ১৫ থেকে ২০ দিন বিলম্ব হয়েছে। তবে আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, এ বছর পেঁয়াজ-রসুন আবাদ কিছুটা বিলম্বিত হলেও আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।
দীর্ঘদিন থেকে জেলার কৃষকরা চাষ ও বিনা চাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ রসুন আবাদ করে আসলেও এখন জমির উপযোগিতা অনুযায়ী বিনা চাষেই বেশি আগ্রহী। বিনা চাষ পদ্ধতিতে যেমন কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে, তেমনি ফলনও বৃদ্ধি পায়। আর ফলন একটু আগাম পাওয়ায় বাজারমূল্যও তুলনামূলক বেশি পেয়ে থাকেন। আমরা কৃষককে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষককে অধিক লাভবান করতে বিনা চাষে পেঁয়াজ-রসুন আবাদে মালচিং পদ্ধতি অবলম্বনে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে আসছি। আশা করছি, আগামীতে শরীয়তপুরে বিনাচাষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।