সুসংবাদ প্রতিদিন

মধুপুর গড়ে চা চাষে সাফল্য খুঁজছেন পাহাড়ি

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল

মধুপুর গড়ের পাহাড়ি অঞ্চলে আনারসের চাষ ছিল দেশবিখ্যাত। এখন সেই লালমাটির পাহাড়ে আনারসের পাশাপাশি চা চাষেও ঝুঁকছেন পাহাড়িরা। চাষ উপযোগী মাটি ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় দেখা দিয়েছে, চা চাষের বাণিজ্যিক ও চাষ সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা। রোগবালাই পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় কম খরচে পরীক্ষামূলক চা চাষ হচ্ছে। মাটির গুণাগুণের কারণে স্বাদণ্ডগন্ধ ঘ্রাণেও রয়েছে ভিন্নতা। ফলে বাগান দেখতেও সুন্দর হওয়ায় ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। ৪ বছর আগে গড়ে তোলা বাগানের ফলন পেয়ে খুশি কর্তৃপক্ষ। কৃষি বিভাগ বলছে, গড় অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আনারস কলার মতো মধুপুর হয়ে উঠবে চা চাষের একটি প্রধান জনপদ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড বৃহত্তর ময়মনসিংহের গারো পাহাড় ও মধুপুর গড় অঞ্চলের ৬ উপজেলায় চা চাষের জন্য সমীক্ষা করে। সমীক্ষার পর চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পঞ্চগড় থেকে চারা এনে মনিকা এগ্রো ফার্ম মুক্তাগাছার মলাজানি গ্রামে আড়াই বিঘা জমিতে গত চার বছর আগে চা চাষ শুরু করে। এটি লালমাটির প্রথম চা বাগান। সৃজিত বাগানের চারদিকে তারের বেড়া। সার বিষ নিড়ানিসহ নিবিড় যত্নে গড়ে উঠেছে বাগানটি। বাগানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে পথ। সহজেই যাতায়াত করা যায়। বছরে দুইবার ছাঁটাই করা হয়। রোগ প্রতিরোধে বালাই নাশক প্রয়োগের কারণে ভালো ফলন পাচ্ছে এ ফার্মটি। তবে লালমাটির গড় অঞ্চলে চা সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে সুলভমূল্যে চারা পায়, সেজন্য তারা আন্তরিক বলে জানালেন মনিকা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আরিফুর রহমান।

স্থানীয়রা জানান, লাল মাটির মধুপুর গড়ের ভূ-প্রকৃতি কোথাও একটু উঁচু কোথাও একটু নিচু। তবে বেশির ভাগ এলাকা সমতল। সামান্য উঁচু এলাকার পাশ দিয়ে বাইদ রয়েছে। বৃষ্টির পানি সহজেই নেমে যায়। যে কারণে আনারস-কলা-কফিসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হয়ে থাকে। মাটির এ বৈশিষ্ট্যের কারণে সহজেই চা চাষও হচ্ছে।

সরজমিনে মলাজানি চায়ের বাগানে দেখা যায়, চায়ের সবুজ সতেজপাতা দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো ছোট ছোট পাতায় ছেয়ে গেছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কচিপাতার উপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। রয়েছে বাগানের চারপাশে সবুজ বৃক্ষাদি। চা বাগানের ভেতরে ছায়া রাখার জন্য মাঝেমধ্যে লাগানো গাছগুলো বাগানের সৌন্দর্য ও ফলনকে ত্বরান্বিত করছে। গাছের সারিগুলো লম্বালম্বি করে দেয়ায় আলো বাতাসও পাচ্ছে পরিমিত। বাগানের একপাশে পিচঢালা সড়ক অপর পাশে নিচু বাইদ চার দিকেই সবুজ কৃষি এলাকা।

লালমাটির গড় অঞ্চল বিভিন্ন কৃষি ফসলের জন্য খ্যাতি অর্জনের পর চা চাষ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা হলে চাষ সম্প্রসারণ ও বাণিজ্যিক হবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিকর্মী রাতুল মুন্সি।

স্থানীয়রা জানান, চা উন্নয়ন বোর্ড গারো পাহাড় ও মধুপুর গড়ের সমতল এলাকায় সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষায় ১৬ হাজার একর জমি চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে। লালমাটির এ চা বাগান হতে পারে চা চাষের দৃষ্টান্ত। মনিকা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আরিফুর রহমান আরো জানান, চার বছর আগে চা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে লালমাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে মনিকা এগ্রো ফার্ম প্রথম চা চাষ শুরু করেছে। ফলনও ভালো পাচ্ছে। গড় অঞ্চলে চা চাষ সম্প্রসারণ, কৃষকরা যাতে সহজে চায়ের চারা নিতে পারে সে জন্য মাতৃ বাগান করেছে তারা। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপুর গড় অঞ্চলের লালমাটি আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি চা চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে মধুপুর গড়ে চা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। লালমাটির মধুপুর গড় অঞ্চলের আনারস, কলা, পেঁপে, কাজু বাদাম, কফি, আদা, কচু যেমন খ্যাতি অর্জন করেছে।