আগের ম্যাচের মতই প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে বিরতির কয়েক মিনিট আগে স্বাগতিকদের সমতায় ফিরিয়েছিলেন মজিবুর রহমান জনি। খেলা গড়াচ্ছিল ড্রয়ের দিকেই। শেষ মুহূর্তে মিডফিল্ডার পাপন সিংহকে মাঠে নামান কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। আর তাতেই বাজিমাত করে লাল সবুজের জার্সিধারীরা। ঘুরে দাঁড়ায়ে রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে স্বাগতিক দল। বাংলাদেশ শুরুটা করেছে কাজেম শাহর জায়গায় মজিবর রহমান জনিকে একাদশে নামিয়ে। আর শুরু থেকে খেলার সুযোগ পেয়ে তার গোলেই বাংলাদেশ সমতায় ফিরেছে। ম্যাচের শুরু থেকে মালদ্বীপ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ৪-২-৩-১ ছকে খেলছে। প্রেসিং ফুটবল তো ছিলই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিল্ডআপ করে খেলার চেষ্টা করেছে। নিচ থেকে খেলা তৈরি করে আক্রমণ করার চেষ্টা। তবে আগের ম্যাচের মতো সুবর্ণ সুযোগ সেভাবে তৈরি করতে পেরেছে কমই। তাই আক্রমণে মালদ্বীপ এগিয়ে।
১৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফাসিরের জোরালো শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। আগের ম্যাচে গোল এসেছিল ১৮ মিনিটে। আজ হয়েছে ২৩ মিনিটে। তপুর ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে। ফাসির আরো একবার বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙেন। তপুর শট গিয়ে পড়ে মালদ্বীপের একজনের পায়ে, সেখান থেকে ডিফেন্স চেড়া পাস ফাসির পেয়ে আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে বাঁ পায়ে আলতো করে জড়িয়ে দেন জালে। তপু আটকানোর চেষ্টা করেন ফাসিরকে, কিন্তু গোল বাঁচাতে পারেননি। তবে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ বলার মতো দুটি সুযোগ পায়।
২৮ মিনিটে রাকিবের শট পোস্টের অনেক দূর দিয়ে যায়। ৪০ মিনিটে আরো একটি সুযোগ নষ্ট হয়েছে। রাকিবের নিচু ক্রসে ফাহিম চলতি বলে প্লেসিং করলে গোলকিপার একটু পাশে সরে হাত দিয়ে প্রতিহত করেন। ফিরতি বলে মোরসালিনের শট পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে যায়। তিন মিনিট পর মজিবর রহমান জনি দারুণ এক গোলে গ্যালারিতে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেন। বক্সের বাইরে থেকে মোরসালিনের ভেতর থেকে পাসে এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে চার জনের মাঝ দিয়ে দারুণভাবে জায়গা বের করে নিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল কাঁপান। গোলকিপার বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও গোল বাঁচাতে পারেননি। বিরতির পর আবার বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নিজেদের কাছে রাখে।
৪৯ মিনিটে ভালো সুযোগ ছিল। রাকিব বক্সের বাইরে এক জনকে ডজ দিয়ে বা পায়ের বুলেট গতির শট জালে জড়ানোর আগ মুহূর্তে গোলকিপার হুসেইন শরীফ এক হাত দিয়ে কোনমতো প্রতিহত করে ব্যবধান বাড়তে দেননি। ৫৩ মিনিটে মালদ্বীপের একজনের ক্রস থেকে আহমেদ রিজুভানের হেড গোলকিপার রুখে দেয় তাদেরকেও এগিয়ে যেতে দেননি। রহমত মিয়া,শাহরিয়ার ইমন,চন্দন রায় নামেন মাঠে। আক্রমণে গতি আরো বাড়ে। ৭৭ মিনিটে আবার মোরসালিনের জায়গায় পিয়াস আহমেদ নোভার অভিষেক হয়। ৮৪ মিনিটে অভিষেক ম্যাচেই গোল পেতে পারতেন নোভা। কিন্তু শাহরিয়ার ইমনের শট গোলকিপার শরীফ ঠিকমতো তালুতে জমাতে পারেননি, ফিরতি বলে সামনে থাকা নোভার দুর্বল শট আস্তে আস্তে বারের পাশ দিয়ে যায়। ৮৮ মিনিটে রহমতের ফ্রি-কিকে তপুর হেড বারের পাশ দিয়ে যায়। এরপরই পাপন সিংহ সোহেল রানার জায়গায় নামেন। যোগ করা সময়ে বদলি পাপন সিংহের গোলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়। শাহরিয়ার ইমনের নিঁখুত ক্রসে পাপন সিংহ বক্সের ভিতরে থেকে দারুণ এক প্লেসিং শটে জয় নিশ্চিত করেন। বছরের শেষটা বাংলাদেশ জয় দিয়ে শেষ করতে পেরেছে। এটাই বড় আনন্দের।
চলতি বছরে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে ৬ হার ও দুই জয় নিয়ে বছর শেষ করলো কাবরেরার দল। আগের জয়টি বাংলাদেশ পেয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে, ভুটানের বিপক্ষে। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ড্র সামনে রেখে এই দুটি ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের হারে সেই চাওয়া পূরণ হলো না। তারপরও, বছরের শেষটা অন্তত জয়ের হাসিতে করতে পারল কাবরেরার দল।