ঢাকা ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ক্যাপসিকাম চাষে সমবায়ী উদ্যোগ

ক্যাপসিকাম চাষে সমবায়ী উদ্যোগ

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প সহযোগিতায় গ্রামের ২৯ জন কৃষক মিলে কাজ করছে একটি জমিতে। কেউ জমি প্রস্তুতের কাজ করছে, কেউবা সার মিশিয়ে দিচ্ছে, কেউ ছিটাচ্ছে জৈবসার। কেউ নালা করছে, কেউ বেড তৈরি করছে আবার কেউবা বসে জিরিয়ে নিচ্ছে। সেইসঙ্গে কেউ ধরেছে মনের সুখে গান। মিলে মিশে যেন সবাই একাকার হয়ে কাজ করছে মাঠে। দেখলে মনে হবে যে শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছে, কিন্তু না তারা কেউ এই জমির শ্রমিক না। কেউ টাকার বিনিময়ে কাজ করছে না এখানে। সবাই এসে এখানে স্বপ্ন বুনছে। আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্য সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করার। বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করা লাভজনক হলেও গরিব কৃষকদের জন্য এটি চাষ মোটেও সহজ নয়। ব্যয়বহুল এ চাষকে সহজ করতে তারা একটি সমিতির মাধ্যমে কাজ করছেন। আর উচ্চমূল্য এ ক্যাপসিকাম চাষে তাদের সহযোগিতা করছে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প। কৃষকদের প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এই কৃষি প্রকল্পটি। যার ফলে বেশ আগ্রহ নিয়ে খুশি মনে মিলে মিশে কাজ করছেন কৃষকরা। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়ীয়া গ্রামের এই কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের ক্যাপসিকামের জমি নিয়ে। এরইমধ্যে তারা জমি প্রস্তুত করে রোপণ করেছেন চারা। প্রায় ৬ বিঘা জমিতে তারা একসঙ্গে ক্যাপসিকামের চারা রোপণ করেছেন। আরো ৪বিঘা জমি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, ক্যাপসিকাম এর চাষ কীভাবে করে সেটি আমরা জানি না। তবে শুনেছি এর জন্য অনেক খরচ করা লাগে। তাই আমরা সমিতির মাধ্যম দিয়ে এবারই প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ করছি। আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্যাপসিকাম চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে এবং কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদের কীভাবে কি করতে হবে সেটি দেখিয়ে দিচ্ছে।

সমিতির সভাপতি ইলিয়াস খাঁন জানান, আমরা ২৯ জন কৃষক মিলে এই সমিতিতে সঞ্চয় করি। সেই টাকা দিয়ে আমরা জমি বর্গা নিয়ে এবার এ ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ক্যাপসিকাম চাষের উপরে ৩দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। সেই সাথে প্রকল্প থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। যার মাধ্যমে এ কাজে আমরা বেশি আগ্রহী হয়েছি। যদি এবার ক্যাপসিকাম ভালো হয় তাহলে আরো বিস্তৃর্ন এলাকায় আমরা ক্যাপসিকামের আবাদ করবো।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ক্যাপসিকাম যেহেতু এই এলাকার জন্য নতুন একটি ফসল। এবং কৃষকরা এটির চাষ সম্পর্কে ততটা অভিজ্ঞ না। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ভালোভাবে চাষের জন্য। এছাড়া তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি এই ক্যাপসিকাম চাষে। কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, ‘ক্যাপপিসাম খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর সবজি। সবজি হিসাবে এবং সালাদ হিসাবেও এটি খাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য অন্য সবজির তুলনায় অনেক বেশি। কৃষকরা এটি চাষ করে বেশ লাভবান হতে পারে। গতবছর কুমারখালীতে ক্যাপসিকাম চাষ করে সবুজ নামের এক যুবক বেশ লাভবান হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ ক্যাপসিকাম চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষকরা যাতে নিরাপদ উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারে এজন্য আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। সেই সাথে মাঠ পর্যায়ে আমরা ক্যাপসিকাম চাষের জন্য প্রদর্শনী বাস্তবায়ন ও মাঠ দিবস করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত