খাদ্যনিরাপত্তা সবচেয়ে বড় মানবাধিকার

বললেন খাদ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্যনিরাপত্তাকে মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় বিষয় বিবেচনা করে সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, খাবারের অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার পাইলট কার্যক্রম নিয়ে উৎপাদন বাড়ানো, কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে খাদ্যশস্য কেনা, আমদানিতে কর ও শুল্ক মওকুফ, খোলা বাজারে কম দামে খাদ্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনের একটি পর্বে দেয়া বক্তৃতায় খাদ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’ (বঙ্গোপসাগর সংলাপ) শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিন খাবার প্রয়োজন। খাবারের অধিকার মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার। এ দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম থাকায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এ দেশের মানুষের কাছে খাবারের মধ্যে ভাত ও রুটি সবচেয়ে অগ্রাধিকার পায় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বছরে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন চাল এবং ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। উদ্যমী কৃষক ও সরকারের সহায়তায় চাল উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে মাঝেমধ্যে বন্যা, ঝড়, খরার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে চালের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন আমদানি করে খাদ্যঘাটতি মেটানো হয়। তিনি জানান, চলতি বছর ১০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছে। ফলে বাকি ৬০ লাখ টন আমদানি করতে হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বড় নেটওয়ার্ক আমদানিতে কাজে যুক্ত আছে। খাদ্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে খাদ্যপণ্য (চাল, গমসহ কয়েকটি পণ্য) আমদানির জন্য সরকার কর ও শুল্ক তুলে নিয়েছে। খাদ্য উপদেষ্টা জানান, দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যপণ্য কম দামে ‘খোলাবাজারে বিক্রি’ (ওএমএস) করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে যেসব মৌসুমে খাদ্য কম উৎপন্ন হয়, সেসব মৌসুমের জন্য খাদ্য মজুত রাখার কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুতের সক্ষমতা রয়েছে। এটাকে ৩০ লাখ টনে বাড়াতে চাইছে সরকার। তিনি আরও বলেন, এখন খাদ্য মজুতের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। এ বছর দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় আমন ধানের উৎপাদন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বন্যায় সাত লাখ টন ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার খাদ্য আমদানি করছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্যতার ওপর চাপ থাকায় সরকার পাইলট (পরীক্ষামূলক) কার্যক্রম নিয়েছে। উত্তরাঞ্চলে পাইলট আকারে আমন ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলকে ‘খাদ্যঝুড়ি’ হিসেবে মনে করা হয়। সরকারের কাছে উৎপাদিত শস্য বিক্রি করতে উৎসাহ দিতে উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীকে প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।