ঢাকা ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় বাড়ছে অর্ডার

চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় বাড়ছে অর্ডার

সম্প্রতি শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গার্মেন্টস খাতে বৈদেশিক কাজের অর্ডার কমেছে। এদিকে ঢাকা, গাজীপুর কেন্দ্রীক গার্মেন্ট কারখানায় অব্যাহতভাবে চলছে শ্রমিক অসন্তোষ। এর এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক পোশাক কারখানাগুলোতে বাড়ছে কাজের অর্ডার। সময়মত পণ্য জাহাজীকরণ নিশ্চিত করতে ঢাকার অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ যেমন চট্টগ্রামের কারখানাগুলো থেকে সাব-কন্ট্রাক্টে পণ্য উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছেন। তেমনি বিদেশি বায়াররাও চট্টগ্রামমুখী হচ্ছেন। এতে সাম্প্রতিক সময় চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে গত কয়েক মাসের তুলনায় বেশি অর্ডার আসছে এমন তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের নেতারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অথচ এর পুরো বিপরীত চিত্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। পুরোদমে উৎপাদনে রয়েছে চট্টগ্রামের ৪৪৬টি তৈরি পোশাক কারখানা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার কারখানাগুলোতে অস্থিরতা থাকায় সময়মতো পণ্য উৎপাদন ও জাহাজীকরণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই বায়াররা বিকল্প হিসেবে চট্টগ্রামকে বেছে নিচ্ছেন। এখানে পণ্য উৎপাদন করে দ্রুততম সময়ে রফতানিও করা সম্ভব হওয়ায় বায়ারদের প্রথম পছন্দ এমনিতেই চট্টগ্রাম। তবে এখানে কমপ্লায়েন্ট কারখানার সংখ্যা কম হওয়ায় বায়ারদের ঢাকায় যেতে হয়। তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরী পোশাক শিল্পের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কারখানাগুলোতে বিপরীত চিত্র।

এখানে পোশাক কারখানাগুলোতে পুরো দমে উৎপাদনে রয়েছে। বায়ারের চাহিদা পূরণে চট্টগ্রামের ৪৪৬টি তৈরী পোশাক কারখানায় বাড়ছে কর্মব্যস্ততা। চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় অবস্থিত ক্লিফটন গ্রুপের নিটওয়্যার পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ডিলাক্স ফ্যাশন লিমিটেড, চলতি বছরের অক্টোবরে প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। কোম্পানির দেয়া তথ্যে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ে ২.৮ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্ডার পেয়ছে। গত বছরের একইসময় তুলনায় ২.৪ মিলিয়ন ডলার বেশি।

বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে গত বছরের অক্টোবরে কোম্পানিটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডজন আন্ডার গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদন ও রফতানির অর্ডার পেয়েছিল, যা এ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ডজনে এসে দাঁড়িয়েছে। একই ধারা বজায় ছিল সেপ্টেম্বর মাসেও। গত বছরের ১ লাখ ৪৫ হাজার ডজনের তুলনায় সে মাসে অর্ডার এসেছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ডজনের। তবে শুধু ডিলাক্স ফ্যাশনই নয়। ক্লিফটন গ্রুপের প্রায় সব কারখানাই গত দুই মাসে (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) প্রত্যাশার তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ক্লিফটন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, এখানে কোনো শ্রমিক অস্থিরতা নেই। পোশাক কারখানাগুলো সময়মতোই পণ্য রফতানি করতে পারছে। তাই ক্রেতারাও অর্ডার দিচ্ছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের তুলনায় এ বছর ১৫-২০ শতাংশ বেশি অর্ডার এসেছে আমাদের কারখানাগুলোতে, যোগ করেন তিনি।

একইভাবে, চট্টগ্রামের সব বড় গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেডিএস, ফোর এইচ, পেসিফিক, এশিয়ান গ্রুপের কারখানাগুলোতেও বাড়তে শুরু করেছে অর্ডার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাঝারি ও ছোট কারখানাগুলোও পিছিয়ে নেই। এমনকি অর্থনৈতিক মন্দায় যেসব কারখানা চালু রাখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, এসব কারখানাতেও নতুন কাজের অর্ডার পেতে শুরু করেছে। এশিয়ান গ্রুপের প্রধান নির্বাহী বেলায়েত হোসেন বলেন, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার অনেক কারখানা অস্থিরতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বায়ারদের অনুমতি নিয়ে ওই কারখানাগুলোর মালিকরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানা থেকে পণ্য তৈরি করে নিচ্ছেন। এতে চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে অর্ডার ও কাজ বেড়েছে। তবে এটি সাময়িক। এই ধারা ধরে রাখতে হলে এখানকার কারখানাগুলোকে কাজের পরিবেশ উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে বলে তিনি জানান। কারণ বায়াররা অর্ডার দেয়ার সময় ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করে কিনা সেটি দেখেন। ঢাকার কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ পরিকল্পিত নাশকতা বলে উল্লেখ করে বেলায়েত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের কারখানা মালিকরা সজাগ ও সচেতন থাকায় এখানে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধতে পারেনি।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চট্টগ্রাম থেকেই রফতানি হয়েছে ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। জুলাই মাসে ৭.৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ১০৬ মিলিয়ন ডলার এবং আগস্টে ৫৫.৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ১৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। বন্যার কারণে সেপ্টেম্বর মাসে ২০ শতাংশ কম হলেও আর্থিক পরিমাণ ছিল ১৩২ মিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, তৈরী পোশাক খাতে মোট রফতানি আয়ের ৯-১০ শতাংশ ভূমিকা রাখছে চট্টগ্রামের ইপিজেড, বিজিএমই ও বিকেএমইএর গার্মেন্ট কারখানাগুলো। অবশ্য এক দশক আগেও এ হার ছিল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। আর এখানে শ্রমিক রয়েছেন ৭ লাখের বেশি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত