অন্যরকম
ন্যানো রোবটে জব্দ হবে ক্যান্সার!
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ক্যান্সারকে কবজা করতে এবার ন্যানো রোবটকে হাতিয়ার করতে চাইছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সুইডেনের বিশ্বখ্যাত ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ন্যানো রোবট তৈরি করেছেন। যা দিয়ে ইঁদুরের ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। গবেষণাটি নেচারের ‘ন্যানো টেকনোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, রোবটটিকে এমন একটি ক্ষুদ্র আকার দেয়া হয়েছে যাতে সেটি টিউমারের ভিতরে গিয়ে উন্মুক্ত হয় এবং সুস্থ কোষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দল এর আগে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল দিয়ে ষড়ভুজ আকৃতির পেপটাইডের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। এই কাঠামোটি কোষের দেয়ালে আটকে ‘ডেথ রিসেপ্টর’ প্রক্রিয়াটি ডেকে আনতে পারে বলে দাবি গবেষকদের। যখন কোনো জীবের এক বা একাধিক কোষ সংক্রামিত হয়, তখন কোষের মৃত্যু ঘটে। কোষগুলোর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য এবং কোষচক্র পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য জীবকোষের মৃত্যু প্রয়োজনীয়। কোষের নিয়মিত ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। পেপটাইডের এই ষড়ভুজাকার ‘ন্যানো প্যাটার্নটি’ একটি প্রাণঘাতী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক বোজর্ন হগবার্গ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, যদি এই পেপটাইডের কাঠামোটিকে ওষুধ হিসেবে ক্যান্সার আক্রান্ত দেহে প্রবেশ করানো হয় তবে এটি নির্বিচারে শরীরের কোষগুলোকে হত্যা করতে শুরু করবে, যার ফল মোটেই ভালো হবে না।
এই সমস্যার সমাধান করার জন্য বিজ্ঞানীরা ডিএনএ থেকে তৈরি একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাঠামোর (ন্যানো স্ট্রাকচার) ভিতরে রোবটটি লুকিয়ে রেখেছেন বলে বলা হয়েছে গবেষণায়। গবেষকদের এই দল বহু বছর ধরে কাজ করে চলেছে। এখন তারা এই ‘অস্ত্র’টিকে সঠিকভাবে চালানোর কৌশল ব্যবহার করে দেখেছেন যাতে সঠিক পরিস্থিতিতে ন্যানো রোবটটি সক্রিয় করা হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রটি তারা এমনভাবে লুকিয়ে রাখতে পেরেছেন, এটি শুধুমাত্র একটি টিউমারের মধ্যে এবং তার আশপাশে পাওয়া পরিবেশেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। যার একমাত্র লক্ষ্য হলো ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকে নিধন করা, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। স্তন ক্যান্সারের টিউমারসহ ন্যানো রোবটটিকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে একটি ইঁদুরের দেহে প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা করেন গবেষকরা। অন্য একটি ইঁদুরের দেহে ন্যানো রোবটের একটি নিষ্ক্রিয় সংস্করণ প্রবেশ করানো হয়। সেই পরীক্ষার যে ফলাফল সামনে এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সক্রিয় ন্যানো রোবটটি ইঁদুরের দেহে টিউমারের বৃদ্ধি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনই এই গবেষণাকে পুরোপুরি সফল বলতে নারাজ ক্যারোলিনস্কার বিজ্ঞানীরা। ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োফিজিক্স বিভাগের গবেষক ইয়ং ওয়াং সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আরো জটিল ক্যান্সারের মডেলগুলোতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখা হবে। বিশেষত মানবদেহের ক্যান্সারের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন জটিল ধরনের টিউমারের ওপর আরো নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত গবেষকদের। ন্যানো রোবটটির সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে কম পিএইচ বা অম্ল পরিবেশে (অ্যাসিডিক মাইক্রোএনভায়রনমেন্ট)। কারণ ক্যান্সারের কোষগুলোর আশপাশেই এই ধরনের পরিবেশ থাকে।