উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। সাতক্ষীরায় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে পানিফলের চাষ। জেলায় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছে চাষিরা। জেলার ১৫০ হেক্টর জলাবদ্ধ পতিত জমি পানিফল চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত পানিফল এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্য জেলায়। চাষিরা জানান, পানিফল, সাতক্ষীরার মানুষের কাছে অতি পরিচিত। জলাবদ্ধ জমিতে এই ফলের চাষ। শুধু গ্রামে নয়, শহরের বাজারেও পাওয়া যায় পানিফল। স্থানীয়দের ভাষায় এটি পানিসিংড়া নামে পরিচিতি। বাংলা ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানি ফল রোপণ শুরু করেন চাষিরা। এরপর পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত চলে ফল বিক্রি। কৃষকরা আশানুরুপ সাফল্য পাচ্ছে বেশি। পতিত জমিতে কম খরচ ও লাভ হওয়ায় পানি ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ সালে ১০৬ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৫৫ টন পানিফল উৎপাদিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪২ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২৩-২৪ সালে জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। উৎপাদিত পানিফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে। অন্য ফলের পাশাপাশি এই ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদাও বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সবার কাছেই পছন্দের। সাতক্ষীরার কলারোয়া এলাকার পানিফল চাষি মো. ইয়াকুব্বর আলী জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিন বছর ধরে এই ফল চাষ করছি। যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। এর আগে জায়গাটা ফেলানো ছিল। এ জন্য জমিটা লিজ নিয়ে আমি এই পানিফল চাষ শুরু করি। এই ফল লাগিয়ে আমার জীবন জীবিকা ভালোই চলছে। এ বছর প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করেছি।
আল্লাহ দিলে ফল ভালোই হচ্ছে। তবে অনেক অংশ ইঁদুর নষ্ট করে দিচ্ছে। ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ থাকবে আশা করছি। তবে পারিশ্রমিক বেরিয়ে যায় বেশি। এছাড়া ইঁদুর ঠেকাতে পারলে আরও বেশি লাভ করা সম্ভব। সদর উপজেলার মাগুরার বাসিন্দা খুশবু আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকায় এই পানিফল চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন সকালেই দেখি পানিফল মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলটি দেখতেও যেমন সুন্দর তেমন খেতেও সুস্বাদু। আর অল্প টাকাতেই এটি আমরা কিনতে পারি। পানিফল চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আরেক পানিফল চাষি শামছুর রহমান বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পানিফল চাষ করছি। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে এটি চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫-২০ মণ ফলন পাওয়া যায়। শুরুতেই প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। দেবহাটা উপজেলার সখিপুর মোড় এলাকার খুচরা পানিফল বিক্রেতা আবদুল গফুর ও রহিম মোড়ল জানান, বর্তমানে তিনি ৪০ টাকা কেজিতে কিনে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিফল একটি অপ্রধান ফল হলেও এটি সাতক্ষীরা জেলায় এটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। কৃষকরা এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ফল বিক্রি করতে পারেন ৪০ হাজার টাকার। এতে তার ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। এটি পানিবদ্ধ স্থানে সহজে চাষ করা সম্ভব। উৎপাদনও খুব সহজ। তিনি বলেন, আগামীতে কৃষকরা যেন তাদের পরিত্যক্ত জলাবদ্ধ জায়গায় পরিকল্পিতভাবে পানিফল চাষ করে আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগের তথ্যনুযায়ি চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে পানিফলের আবাদ করা হয়েছে আর ৩ হাজার ৫০০ টন ফল উৎপাদন হবে আশা করছেন কৃষিবিভাগ।