প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আশাহত মির্জা ফখরুল

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশ একটি ক্রান্তিকাল পার হচ্ছে। গত রোববার আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন, ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটি রূপরেখা দেবেন। আমি কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। কারণ নির্বাচন দিলে আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাক, না যাক, সেটা বড় বিষয় নয়। কিন্তু আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে সংঘাতে জড়াতে চাচ্ছে, তারা তখন পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এটা চিন্তা করতে হবে। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন একটি পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনটা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে, ছেলেরা কী বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে- ছেলেরা সব আন্দোলন একাই করেছে সেটা মানতে রাজি না। এটা অনেকে জোরেসোরে মিটিংয়ের মধ্যেই বলছে। সত্য কথা, আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেলে গেছি। তারপরও শেষ লাথিটা গোলে কে মেরেছে? ছাত্ররা মেরেছে। তিনি বলেন, আমরা (বিএনপি) যখন সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করছি, তখন আমি আমার বক্তব্যে একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলতাম। আমরা তো নবীনদের দেখতে পাচ্ছি না, তরুণদের দেখতে পাচ্ছি না, ছাত্রদের দেখতে পাচ্ছি না। ছাত্র-তরুণরা যদি সঙ্গে না আসে, তাহলে গুলি বুক পেতে নেবে কে? বুক পেতে গুলি নেয়ার প্রতীক ছাত্র, তরুণ, যুবক। যার পিছুটান নেই, যে ভ্যানগার্ড আমরা মধ্য বয়সী, বয়স্করা পরিবারের কথা চিন্তা করি। আমরা ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করি। আমি যদি আজ গুলি খেয়ে পড়ে যাই, আমার পরিবারের কি হবে সেই চিন্তা করেছি- তাই না? কিন্তু বুক পেতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, সাঈদ রংপুরে যেভাবে দাঁড়ালো, দ্যাট ওয়াজ দ্য টার্নিং পয়েন্ট অব মুভমেন্ট। এই বিষয়টি আমাদের চিন্তা করতে হবে। সুতরাং, ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য দ্রুত নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যতদিন বেশি থাকে, তত সমস্যা তৈরি হবে। কারণ এর তো মেন্ডেট নেই। এ তো নির্বাচিত সরকার নয়। এর পেছনে শক্তিটা কোথায়? এ জন্যই এই সরকারকে চিন্তা করতে হবে, যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব, প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নির্বাচন দিতে হবে। আমরাও সংস্কার চাই, তবে তা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে করতে হবে। এমন সময় যেন না নেয়, যে সময় নিতে গেলে জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা হয়, যে আপনি (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) থেকে যেতে চাইছেন।

তিনি বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেছে কেন? হাসিনা পালিয়ে গেছে, সে চিন্তা করতে ভুল করেছে। আমরা বার বার বলেছি, দেয়ালের লিখন পড়েন, মানুষের চোখের ভাষা বোঝেন। মানুষ এখন আর আপনাদের চায় না। আপনারা দেশটাকে ধ্বংস করছেন। আমাদের কথা তারা শুনেনি। না শুনে উল্টো নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে এবং শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেছে। আমরা কেউ যেন এমন কাজ না করি, যা দেশকে আবার অনিশ্চয়তা, অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, মওলানা ভাসানী আমাদের সেই পথ বারবার দেখিয়েছেন। তিনি প্রথম পল্টন ময়দানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তিনি প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিলেন। একদিকে তিনি যেমন আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারতেন, আরেক দিকে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা করে নিয়ে আসতে পারতেন।