মহাখালীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট

* উপকূল এক্সপ্রেসে ঢিল নিক্ষেপ * শিশুসহ কয়েকজন আহত

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মহাখালী, বনানী, আমতলী, গুলশানসহ রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে থমকে যায় শত শত যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। গতকাল সোমবার মহাখালী রেলক্রসিং ও রেললাইন অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও সকালে ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আন্দোলনকারীদের হামলায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাখালী এলাকার দুটি ট্রেন আটকে দেন। ওই ট্রেন দুটি হলো জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী বনলতা এক্সপ্রেস। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে সময় যত গড়াচ্ছে শহরজুড়ে যানজট তত তীব্র হয়। বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে নেমে শত শত মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

মহাখালী আইসিডিডিআর, বি হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসেন মমতাজ উদ্দিন নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘উত্তরা থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল আসতে দুই ঘণ্টা লেগেছে। এমন পরিস্থিতে আমারই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তাহলে রোগীর কী হবে।’

মহাখালীতে প্রাইভেটকার নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছেন ফাহিমুর রহমান নামে ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন যার যা ইচ্ছে তাই করছে। আর সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে একটি জায়গায় যাচ্ছিলাম। এখানেই দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি। গাড়ি ফেলে যেতেও পারছি না। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’

এ বিষয়ে বনানীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রভাবে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তাদের আন্দোলনের কারণে মহাখালী, বনানী ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না।

ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি মহাখালী লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় আন্দোলন থেকে ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। বিক্ষোভ পরিস্থিতির কারণে ঢাকা সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।’

এদিকে, রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে ছোড়া ঢিলে একটি ট্রেনের বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। তিনি বলেন, বেলা পৌনে ১২টার দিকে নোয়াখালী থেকে আসা উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী পার হচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। তারা ট্রেনে পাথর মারে। এতে পাঁচটি কোচের জানালার ২৯টি কাঁচ ভেঙে যায়। আর কয়েকজন যাত্রী আহত হন। আহতদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। আহতদের মধ্যে শিশুও আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে ট্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানালার কাঁচ ভেঙে ভেতরে থাকা শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে কতোজন আহত হয়েছেন সঠিক সংখ্যাটি আমার জানা নেই।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার এবং রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন দুপুরে রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের দেখে উপকূল এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার ব্রেক কষেন। তবে ট্রেনটি থামে অবরোধস্থল পার হওয়ার পর।

সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা রেল লাইন থেকে সরে যাওয়ায় অল্পের জন্য তারা প্রাণে বেঁচে যান। ততোক্ষণে কেউ কেউ ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারেন। এদিকে মহাখালীতে অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা রেললাইন ব্লক করেছে। ওখানে একটা ট্রেন আটকে আছে জানি, কোনটা এখনও শিউর হতে পারিনি। আমাদের কন্ট্রোল রুমে কথা বললাম তারা বলেছেন কোনো ট্রেন এখন ছাড়ছে না।

দাবি বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা এসেছে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে। অবস্থান নেয়ার আগে তারা কলেজ ক্যাম্পাস ও সামনের সড়কে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয় করার এক দফা দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তিতাস বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তায় এসেছি। গত ২৭ বছর ধরে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে না। জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে। আমাদের ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ করছে না।

গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল নোমান নীরব বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিতুমীর কমিশন গঠনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে বা নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে আমরা স্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ থাকবে।