২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট

সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ের ওপর জোর : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন এবং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেয়া হলেও সরকার পরিবর্তনের পর নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট ব্যয় সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধিত বাজেটের মাধ্যমে অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর উদ্দেশ্য সামনে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের নীতিমালা ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যার আওতায় রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির পূর্বাভাস ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সংশোধন করা হবে।

মূল বাজেটের সীমার মধ্যেই সংশোধন : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন মূল বাজেটে প্রদর্শিত ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে থাকতে হবে। কোনো অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবি অনুমোদিত হবে না। যদি কোনো খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত থাকে, তবে তা পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না। এই দিকনির্দেশনার মাধ্যমে অর্থ বিভাগের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, সংশোধিত বাজেটের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে তাদের পরিচালন বাজেটের সংশোধিত প্রাক্কলন জমা দিতে হবে। এ নির্দেশনার আওতায় সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

অর্থনীতির স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বাজেট সংশোধন : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাথমিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নানা কারণে অর্থ বছরের সাড়ে ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমিত হয়নি। এর ফলে সরকার বাজেটের ব্যয় এক লাখ কোটি টাকার মতো কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচন করে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন : অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট করেছে যে, চলতি অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্য পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে বিদ্যুৎ, পেট্রোল, গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া, নতুন আবাসিক বা অনাবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য কোনো বরাদ্দ ব্যবহার করা যাবে না। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, সব ধরনের যানবাহন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণের খাতেও পরিচালন বাজেট থেকে ব্যয় বন্ধ রাখা হবে, তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে খরচ করা যাবে।

সংশোধিত রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির পদ্ধতি : সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির প্রাক্কলন করতে হবে বিগত দুই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের রাজস্ব আদায়ের ভিত্তিতে। যদি কোনো নির্দিষ্ট খাতের রাজস্ব আদায়ের হার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তবে সংশোধিত বাজেটে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

পরিচালন ব্যয়ের সংশোধনের নির্দেশনা : মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার-পাঁচ মাসের প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরি করতে হবে। বিশেষভাবে বেতন-ভাতা খাতে প্রথম তিন মাসের ব্যয়ের ভিত্তিতে সংশোধিত প্রাক্কলন করা হবে। এছাড়া, যদি কোনো খাতে অর্থ বিভাগের অনুমোদনে পুনঃউপযোজন করা হয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট কোডে এর প্রতিফলন সংশোধিত বাজেটে নিশ্চিত করতে হবে।

সংশোধিত এডিপি : গুরুত্ব ও নির্দেশনা সংশোধিত এডিপি প্রণয়নে কয়েকটি প্রধান নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে না রাখা, অগ্রাধিকার বাছাই করা এবং ধীরগতির প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং বন্যা-উত্তর পুনর্বাসনের প্রকল্পগুলো সংশোধিত এডিপিতে অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া, বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানভিত্তিক প্রকল্পগুলো সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব পাবে। অননুমোদিত কোনো কর্মসূচি বা স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া যাবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জিওবি এবং পিএলজি/জি অংশে ব্যয়ের যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণ ও অন্যান্য ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ : অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা এবং সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এবং সঠিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সীমিত আকারে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। সরকারের এই কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রেখে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং উন্নয়ন কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাই এই সংশোধিত বাজেটের মূল লক্ষ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, এবং অন্যান্য সংস্থাকে তাদের বাজেট ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্বের ব্যয়ের ধারা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এর ফলে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে এবং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।