ঢাকা ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ভার্মি কম্পোস্টের বাণিজ্যিক উৎপাদনে ভাগ্য পরিবর্তন

ভার্মি কম্পোস্টের বাণিজ্যিক উৎপাদনে ভাগ্য পরিবর্তন

রংপুর জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন উপজেলায় জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। উল্লেখযোগ্য লাভের কারণে জেলার অনেক উদ্যোক্তা কেঁচো চাষ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের কালীগঞ্জপাড়া গ্রামের ভার্মি কম্পোস্টের সফল উদ্যোক্তা মো. আজিজার রহমান বলেন, তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ১২ বছর আগে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে তিনি দুটি কংক্রিটের রিং বসিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। তিনি রিংগুলোতে কেঁচো, আবর্জনা ও গোবর ফেলেন। বর্তমানে, তার একশ’টি কংক্রিটের রিং রয়েছে যাতে তিনি জৈব সার তৈরি করেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ১০ টাকায় বিক্রি করেন। ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি থেকে তার মাসিক আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, কেঁচো বিক্রি করে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার দুই একর ফসলি জমিতে নামমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। কারণ আমি বেশিরভাগ ফসল, বিশেষ করে আলু ও অন্যান্য সবজি চাষের জন্য নিজের খামারে উৎপাদিত জৈব ও পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার ব্যবহার করি। এই ধরনের সার জমির উর্বরতা বাড়ায়,’ তিনি আরও বলেন, তার সাফল্য দেখে তার এলাকার পাশাপাশি তার আশেপাশের এলাকার বেশ কিছু সংখ্যক কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে তাদের জমিতে পরিবেশবান্ধব জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। বেশ কয়েকজন ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদক বলেছেন, কম্পোস্ট সারের ব্যবসার প্রচার করা উচিত কারণ এটি ফসলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাটির পাশাপাশি পরিবেশের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। তারা জানান, এই জৈব সার খুবই কার্যকর। তারা যদি যথাযথ প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত বিপণন সুবিধা এবং অন্যান্য সরকারি সহায়তা পায়, তবে তারা অবশ্যই ব্যবসাটি প্রসারিত করতে পারবে যা অন্যদেরও উৎসাহিত করবে। এই অঞ্চলের অনেক কৃষক রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে জৈব সারের গুণমানের প্রশংসা করেছেন, কারণ রাসায়নিক সার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুরের উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার মাটির উর্বরতা উন্নত করতে পারে এবং ফসলের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এটি সবজির পাশাপাশি সব ধরনের ফসল চাষে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রবি মৌসুমে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। তিনি বলেন, তারা এ ধরনের জৈব সার ব্যবহার এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহারের সাথে জড়িতদের প্রয়োজনীয়তা প্রদান করছেন।

তিনি বলেন, নির্বিচারে রাসায়নিক সারের ব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে। অন্যদিকে ভার্মি কম্পোস্ট একটি পরিবেশবান্ধব জৈব সার। ইউরিয়া ও অন্যান্য সারের চেয়েও এ সার সস্তা। এটি মাটি, মানুষ, প্রাণী এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না এবং এইভাবে পরিবেশকে সুরক্ষিত রেখে ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত