ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জোড়া লাগানো শিশুর চিকিৎসায় বিএসএমএমইউর সাফল্য

জোড়া লাগানো শিশুর চিকিৎসায় বিএসএমএমইউর সাফল্য

দীর্ঘ চিকিৎসা ও ৫টি সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল জোড়া শিশু নূহা-নাবা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিদায় দিয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবিন ব্লকের ৬ তলায় গিয়ে বিরল যমজ জোড়া দেহ থেকে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের রিলিজ দেন। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পতির সন্তান নূহা ও নাবার শরীরের পেছন ও নিচের দিক থেকে যুক্ত ছিল। কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস নূহা ও নাবাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করায় বিএসএমএমইউ এর প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে শিশুটির পরিবার। নূহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেবিন ভাড়া, হাসপাতাল ফার্মেসির মাধ্যমে ওষুধ ক্রয় ব্যয়, নিউরোসার্জারি বিভাগ কর্তৃক অপারেশনকালীন ক্রয়কৃত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদী ব্যয়, এ্যানেসথেশিয়া সামগ্রী ও অপারেশন বা ওটি চার্জ ইত্যাদি। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর ১৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অনুদানকারী তাঁর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে এই অনুদান পেতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন সাংবাদিক তাওসিয়া তাজমিম ও দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক চৌধুরী খালেদ মাসুদ। অর্থাৎ জোড়া লাগানো যমজ শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান জানিয়েছেন নূহা ও নাবাকে ডিসচার্জ দেওয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে এবং আরও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। শিশু নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল ২০২২ সালের ২১ মার্চ। বিএসএমএমইউতে তাদের ভর্তি করানো হয়েছিল ৪ এপ্রিল ২০২২ সালে। তারপর থেকে তারা এখানেই বেড়ে উঠেছে। শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসায় নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নিউরোসার্জনরা, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জনগণ, এ্যানেসথেশিওলজিস্টসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই জোড়া লাগানো দেহের যমজ শিশু নূহা ও নাবা আলাদা হওয়ার আনন্দ নিয়ে ২ বছর ৭ মাস ২০ দিন পর সুস্থ হয়ে মা বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত ৩ জোড়া জোড়া লাগানো শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এবং আরও এক জোড়া লাগানো শিশুদের আলাদার প্রস্তুতি চলছে। তাদের রিলিজ দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত